প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

অনেক বাধা পেরিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে ময়মনসিংহের সুমাইয়া

admin
প্রকাশিত
অনেক বাধা পেরিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে ময়মনসিংহের সুমাইয়া

স্পোর্টস ডেস্ক:
শুধু মাহমুদুল্লাহ কিংবা মোসাদ্দেকরাই নয়, ক্রীড়াঙ্গনে ময়মনসিংহের নাম উজ্জ্বল করেছেন সানজিদা, সাবিনা, মারিয়ারাও। একেকজন হয়ে উঠেছেন জ্বলজ্বলে তারকা। সেই তারকাদের নামের পাশে যুক্ত হচ্ছে নতুন আরেকটি নাম। তিনি নারীদের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে অন্যতম সদস্য সুমাইয়া আক্তার। যিনি দীর্ঘ বাধা পেরিয়ে পৌঁছেছেন বিশ্বমঞ্চে। তাকে নিয়ে এখন গর্বে-আনন্দে ভাসছেন গোটা ময়মনসিংহবাসী।

তবে উদীয়মান এ নারী ক্রিকেটারের পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না। একসময় খেলাধুলা নিয়ে সুমাইয়ার পরিবারকে শুনতে হয়েছে প্রতিবেশীদের নানা কটুকথা। সেইসব সহ্য করতে না পেরে খেলতে যেতে নিষেধও করেছিলেন মা-দাদা। কিন্তু কোনোকিছুরই তোয়াক্কা করেননি বাবা সাইফুল ইসলাম। চালিয়ে গেছেন মেয়ের অনুশীলন। একপর্যায়ে তৃণমূল পর্যায় থেকে নারী ক্রিকেটার বাছাইয়ে সুমাইয়া দৃষ্টি কাড়েন বিকেএসপির। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

গতকাল বুধবার বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি জয়ের মাধ্যমে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সুপার সিক্সে উঠেছে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ক্রিকেট দল। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যখন খেলা চলছিলো তখন ময়মনসিংহের কাচারিঘাটের একটি চায়ের দোকানে বসেই কিছুক্ষণ পরপর অনলাইনে মেয়ের খেলার স্কোর দেখছিলেন সুমাইয়ার বাবা স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই চলে সুমাইয়াকে নিয়ে গল্প। জানান সুমাইয়ার ক্রিকেটার হওয়ার পেছনের আদ্যোপান্ত।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি জোঁক ছিল সুমাইয়ার। বাড়ির আশপাশে খালি জমিতে ছেলেদের ক্রিকেট দেখলেই সেখানে ছুটে যেত সে। বসে থেকে দেখতো খেলা। মাঝেমধ্যে নিজের কাছে বল চলে এলে তা কুড়িয়ে এগিয়ে দিত। এমনকি কখনো কখনো নিজেও খেলতে চাইতো। ক্রিকেট নিয়ে সুমাইয়ার এমন আগ্রহ খেয়াল করে তার চাচা রাজা আলী। তাকে ক্রিকেট ক্লাবে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেয় আমাকে।

২০১৩ সালে সুমাইয়া কাচারিঘাট এলাকার মহিলা সমিতি উদয়ন বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় তাকে নিউ জেনারেশন ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে ভর্তি করা হয়। প্রতিদিন নৌকা দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে স্কুলে এবং স্কুল শেষে ক্রিকেট কোচিংয়ে যেতো। কোনোদিন স্কুল এবং ক্রিকেট কোচিং বন্ধ করেনি সুমাইয়া।

 

সাইফুল ইসলাম আরও জানান, ২০১৬ সালে মাত্র দশ টাকার টিকেটে নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠে বিকেএসপির তৃণমূল পর্যায় থেকে নারী ক্রিকেটার বাছাই কার্যক্রমে অংশ নেয় সুমাইয়া। তখনই বিকেএসপির নজরে আসে সে। সেখান থেকেই বিকেএসপিতে প্রথমে দুই মাস এবং পরে একমাস ক্যাম্পে থাকার সুযোগ পায়। সেখানে ভালো করায় বিকেএসপিতে ওই বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পায়। গতবছর জিপিএ ৪.৪ পেয়ে এসএসসি পাশ করেছে সুমাইয়া।

সুমাইয়ার বাবা বলে চলেন, শুরুতে ক্লাবে ভর্তি করানোর পর থেকেই মানুষ নানা কথা বলতো। আমার বাবা আক্কাস আলী তখন জীবিত ছিলেন এবং স্থানীয় দুইটি মসজিদের সভাপতি ছিলেন। বাবাকেও মানুষজন অনেক কথা বলেছে। সেই কারণে সুমাইয়াকে খেলা বাদ দিতে বলেছিল তার দাদা৷ কিন্তু আমি ছিলাম কঠোর অবস্থানে। গ্রামের মানুষের ওইসব কথায় কান না দিয়ে মেয়েকে নিয়ে এগুতে থাকি। আমার ব্যবসায়িক বন্ধুরা আমাকে সবসময় উৎসাহ দিত৷ সেই প্রেরণা নিয়েই মেয়েকে নিয়ে আমার ক্রিকেটের যুদ্ধটা চলতে থাকে। তবে বিকেএসপিতে চলে যাওয়ার পর স্থানীয় প্রতিবন্ধকতা আর মোকাবিলা করতে হয়নি।

বাবা সাইফুল ইসলামের প্রত্যাশা, মেয়ে একদিন মূল দলের হয়ে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে মাঠে নামবে। বিশ্বমঞ্চে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে, সুনাম বয়ে আনবে।

সুমাইয়ার মা শাহনাজ পারভীন বলেন, আশেপাশের মানুষের কথা শুনে মেয়েকে খেলায় যেতে অনেক বারণ করেছিলাম শুরুতে। তবে মেয়ের আগ্রহ আর তার বাবা যেভাবে পাশে ছিল তাতেই এতদূর এগিয়ে যেতে পেরেছে। এখন সুমাইয়াকে নিয়ে এলাকায় উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। গ্রামের সবাই তাকে নিয়ে গর্ব করছে। আমাদেরও খুব ভালো লাগছে। মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।

সুমাইয়া আক্তারের বাড়ি ময়মনসিংহ নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের চরঈশ্বরদীয়া গ্রামে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মেঝ সুমাইয়া আক্তার। বড় বোন শায়লা আক্তার বিবাহিত এবং সাড়ে তিন বছর বয়সী ভাই আসাদুজ্জামান সাহাদ।

নারীদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সুমাইয়া আক্তার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের প্রথম ম্যাচে ৩১ রানে অপরাজিত থেকে ঐতিহাসিক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাটিংয়েই নামতে হয়নি তাকে। সবশেষে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নেমে করেন দশ রান। এদিন ৫ উইকেটে জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যত খ্যাতি পাওয়া দলটি।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন।