স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য ‘শিক্ষা ভিসায়’ যুক্তরাজ্যে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ। গত প্রায় দুই সপ্তাহ থেকে যুক্তরাজ্যের এই সিদ্ধান্তে বিয়ানীবাজার উপজেলাজুড়ে দু:শ্চিন্তা কেবল বাড়ছে। এই ক’দিনে স্থানীয়ভাবে সবক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়েছে। সবথেকে বেশী বেকায়দায় পড়েছেন লন্ডন যেতে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা। তাদের অনেককে হতাশা ঘিরে ধরেছে।
বিয়ানীবাজারের মানুষের কাছে লন্ডন একটি স্বপ্নের নাম। যে কোন ভাবে সেখানে পৌছাঁতে চায় এখানকার লোকজন। বৈধ-অবৈধ উপায়ে লন্ডন গিয়ে জীবন গড়তে স্বপ্ন বুনে বিয়ানীবাজারের তরুণরা।
সম্প্রতি লন্ডনে পাড়ি দেয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় শিক্ষা ভিসা চালু হওয়ায় কপাল খুলে স্থানীয়দের। ‘ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম-আইইএলটিএস’-এ স্কোর পাঁচের ওপর করতে পারলেই যেন যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্টস ভিসার সোনার হরিণ হাতের মুঠোয় ধরা দেয়। অনেক শিক্ষার্থী যাওয়ার সময় নির্ভরশীল হিসেবে সঙ্গে নিয়ে গেছেন স্পাউস ও সন্তানদের। ভিসা প্রাপ্তি সহজ হওয়ায় গত চার বছরে বিয়ানীবাজার উপজেলা থেকে শিক্ষার্থী ও তাদের নির্ভরশীল হিসেবে প্রায় ৩ হাজার লোক যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ‘শিক্ষা ভিসা’ ও ইমিগ্রেশন শর্ত শিথিল করায় সেসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ বৃদ্ধি পায় বিয়ানীবাজারের শিক্ষার্থীদের।
বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে ‘শিক্ষা ভিসা’ প্রাপ্তির হার বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার হিড়িক পড়ে। তিন ও চার বছরমেয়াদি স্নাতক এবং এক ও দুই বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে ছুটতেন তারা। শিক্ষা ভিসার জন্য আইইএলটিএস করার জন্য ভিড় থাকতো সেন্টারগুলোতে।
বিয়ানীবাজার পৌরশহরের হেক্সাস সেন্টারের পরিচালক সাইবুল আলম রেজা জানান, লন্ডনের শিক্ষা ভিসা বন্ধ হওয়ায় তাদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি কমেছে। বিগত সময়ে মাসে ২ শ’রও বেশি শিক্ষার্থী আইএলটিএস পরীক্ষায় অংশ নিতো। গত দুই সপ্তাহ থেকে তা অনেক কমে গেছে।
মাসুদ নামের যুক্তরাজ্যগামী এক শিক্ষার্থী জানান, সব কাগজপত্র তৈরী করার পর হঠাৎ লন্ডন থেকে ভিসা বন্ধের সিদ্ধান্ত আসায় তিনি আর সেখানে যেতে পারছেননা। লন্ডন থেকে তার জন্য অফার লেটার আনা, ব্যাংক হিসাব প্রস্তুত করাসহ অন্যান্য সব ধরণের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ হলেও তার আশা পূরণ হয়নি। তিনি এজন্য চরম হতাশ বলে জানান।
জানা যায়, বিয়ানীবাজারে ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে ‘শিক্ষা ভিসা’র দ্বার প্রসারিত হয়। ওই সময় থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থী। এরপর করোনার কারণে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দেয়। ২০২১ সালে শিক্ষা ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান প্রচুর শিক্ষার্থী। শিক্ষা ভিসায় যুক্তরাজ্যে যাওয়ার এই ঢেউয়ে পড়েছে ভাটার টান।
২০২২ সালের জানুয়ারি সেশনে প্রচুর সংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে গেছেন। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর সেমিস্টারেও বিয়ানীবাজার থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে গেছেন।
বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি হাসান শাহরিয়ার জানান, যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখার জন্য শিক্ষা ভিসা অনেক সহজ ছিল। কিন্তু ভূয়া কাগজপত্র এবং অন্যান্য অসত্য কাগজপত্র জমা দেয়ার বিষয়টি লন্ডনের কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। যে কারণে এখন শিক্ষা ভিসায় লন্ডন যাওয়া বন্ধ রয়েছে।
বিয়ানীবাজার ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপক দেলোওয়ার হোসেন বলেন, লন্ডনের শিক্ষা ভিসা বন্ধ থাকায় অনেক অভিভাবকের মন খারাপ। এমন সিদ্ধান্ত ব্যাংকিং খাতেও প্রভাব ফেলেছে।
সংবাদটি শেয়ার করুন।