সিলেট ২৯শে জুন, ২০২২ ইং | ১৫ই আষাঢ়, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:০১ অপরাহ্ণ, জুন ২২, ২০২২
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
রাজু মিয়া (৩৫) মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের মুর্শিবাদকুরা গ্রামের বাসিন্দা। বাজারে বাজারে মাছ বিক্রি করে চলত তার সংসার। নিজের চাষের যে জমি আছে তা থেকে যে ধান হয় বছরের কয়েক মাস চলে তাদের। তবে এখন সেই জমি এবং ফসল সবই পানির নিচে।
সঙ্গে বসতঘরেও বন্যার পানি। বাধ্য হয়ে গত শনিবার পরিবার নিয়ে রাজু আশ্রয় নিয়েছেন হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে।
শুধু রাজুই নয় ওই ইউনিয়নের অনেক মানুষ এই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে গেছেন। কেউ আবার কোনো উপায়য় না পেয়ে পানিবন্দি ঘরেই আছেন পরিবার নিয়ে।
রাজু মিয়ার বলেন, ‘বুঝতেছিলাম পানি বাড়ছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এমনভাবে বাড়ছিল যে জীবন নিয়ে কোনোমতে স্কুলে আশ্রয় নিছি। ঘরে ধান-চাল সব রাখিয়া আইছি। নিজের একটা নৌকাও নাই যে এগুলো লগে আনতাম। ঘরের মধ্যে ধান-চাল পানিতে ভিজ্জা নষ্ট হয়েছে। এখন মানুষের হাতের দিকে চাইয়া আছি। কেউ দিলে আমরা খাইতাম। রুজি রোজগারও নাই। বাজার-ঘাট সব বন্ধ। ’
ওই আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া মুর্শিবাদকুরা গ্রামের তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঘরে যা আছে তা রাখিয়া আইছি। লগে আনার পরিস্থিতি আছিল না। সব শেষ। আশ্রয় কেন্দ্রে আইছি তুড়া (অল্প) চিড়া-মুড়ি পাইছি বাবা। ভাতের পেট, তোলা পানিয়ে পেট ভরে না। এখন কপালে দুর্গতি থাকলে তো আর কষ্ট করা ছাড়া উপায় নাইরে বা। ’
রাজু মিয়া, তাজুল ইসলামের মতো একই অবস্থা মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সুজানগর, বর্ণি, দাসেরবাজার, নিজবাহাদুরপুর, উত্তর শাহবাজপুর, দক্ষিণভাগ উত্তর উত্তর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের মানুষের। গত কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় দুর্ভোগে পড়েছেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ।
উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রায় ২০০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ অবস্থায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় খোলা হয়েছে ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্র। প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এখন নৌকা।
এদিকে বন্যায় বড়লেখা উপজেলার ১৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৮টি পানিবন্দি এবং ২৩টি বিদ্যালয়কে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলোতে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে মাধ্যমিক ও মাদরাসা মিলিয়ে ৫১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। ১৫টি পানিবন্দি অবস্থায় আছে। এগুলোতে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এক হাজার পরিবারে খিচুড়ি বিতরণ : মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ, ইউএনও খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী, ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন ও বড়লেখা থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদারের সহযোগিতায় তালিমপুর ইউনিয়নের এক হাজার পরিবারের মধ্যে রান্না করা খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। দুর্বারমুক্ত স্কাউট দল বিতরণে সহযোগিতা করে।
মেডিক্যাল টিমের ওষুধ বিতরণ : মঙ্গলবার বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে গঠিত মেডিক্যাল টিম উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন ও অন্যান্য সাধারণ জরুরি ওষুধপত্র বিতরণ করে।
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক আমরা দুর্গত এলাকার খোঁজ খবর রাখছি। মঙ্গলবার সকল আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবারের পাশাপাশি খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া যেসকল সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে, তাদের সাথে আমরা সমন্বয় রাখছি। যাতে সকল মানুষের হাতে খাবার ও ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া যায়। ’
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক
সম্পাদকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম
প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্য্যালয়ঃ উত্তর বাজার,কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট । মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২ ইমেইলঃagamiprojonma@gmail.com