প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

বেড়ে চলেছে ক্ষয়ক্ষতি

admin
প্রকাশিত
বেড়ে চলেছে ক্ষয়ক্ষতি

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যায় সারা দেশে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষয়ক্ষতি বেড়েই চলেছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্যায় ১৫ জেলায় প্রায় ৬৯৬০০টি মৎস্য খামার ভেসে গেছে। এতে প্রাথমিক হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৬০ কোটি টাকা। এ ছাড়া দেশের ৭৪টি উপজেলায় ১৫ হাজার ৬০টি গরুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে খামারিদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৬১ কোটি টাকা।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বন্যায় প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমির আউশ ধান এবং সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বন্যায় কয়েক লাখ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বন্যায় প্রায় ১৬ হাজার ৫৮২ মেট্রিক টন মাছ এবং ৫৭৫ কোটি ৭৯ লাখ পোনা মাছ ভেসে গেছে। মাছ ও মাছের পোনা মিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের মাছের বাণিজ্যিক মূল্য ১২৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। মাছের পোনার বাণিজ্যিক মূল্য ২১ কোটি ৭ লাখ টাকা। এ ছাড়াও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মাহবুবুল হক বলেন, এ হিসাব প্রাথমিক। প্রতিদিনই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ জানতে আরও সময় লাগবে। মৎস্য অধিদফতরের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, সুনামগঞ্জে ৮৬৬৫টি খামারে আর্থিক ক্ষতি ৫২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। হবিগঞ্জে ১৩৪৮ খামারে ক্ষতি ১৭ কোটি টাকা। সিলেটে ২৫ হাজার ২৪০ খামারির ৩০ হাজার ২৫৫ খামার ভেসে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

মৌলভীবাজার এলাকার ২১০ খামারির ২৭০টি খামার ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া রংপুর বিভাগে ৮০৫ খামারির ১০৪২টি খামার ভেসে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে ১৯ কোটি ৫৯ হাজার টাকা। সিরাজগঞ্জের ১৯ খামারির ২৮টি খামারে ক্ষতি হয়েছে ২০ লাখ ৯১ হাজার টাকা। কিশোরগঞ্জে ৩২৫ জন খামারির ৩২৫টি খামার ভেসে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে ১৪ কোটি ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১৫৫ খামারির ২২৯টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ১১ কোটি ৯০ রাখ ৫০ হাজার টাকা।

ময়মনসিংহের ২১৫ খামারির ৩৫৫টি খামারে ক্ষতি হয়েছে ১১ কোটি টাকা। নেত্রকোনার ১৫ হাজার ৩৪৬ খামারির ২৫ হাজার ৯২৬টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা। জামালপুরের ১৪০ খামারির ১৩৬টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতি পরিমাণ ২১ লাখ ১০ হাজার টাকা। শেরপুরের ৭৪০ জন খামারির ১০৩১টি খামার তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৩৩ কোটি ৩ লাখ টাকা।

এ ছাড়া বন্যায় দেশের ১২টি জেলার ৭৪টি উপজেলার ৩১৬টি ইউনিয়নের ১৫ হাজার ৬০টি গরুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খামারিদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৬১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কন্ট্রোলরুম সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগে ৯৮০টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ১০ কোটি ৭৮ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ টাকা। ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৮০টি খামারে ক্ষতি হয়েছে ১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা জানান, এটি প্রাথমিক হিসাব। এখনও সারা দেশের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, বানভাসি মানুষের খাবারের পাশাপাশি গবাদি পশেুর খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসন এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, চলমান বন্যায় সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে ২৮ হাজার হেক্টর এবং সিলেটে ২২ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৫৬ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধান ছাড়াও শাকসবজি, তিল, বাদাম প্রভৃতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী না হলে এখন পর্যন্ত যতটুকু ক্ষতি হয়েছে, সেটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। সেজন্য ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতিও শুরু করা হয়েছে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান কৃষিমন্ত্রী।

আমন ধানের উৎপাদন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশে আমন একটি বড় ফসল, যেখানে বছরে ১ কোটি ৫০ লাখ টনের মতো চাল উৎপাদন হয়। এখন রোপা আমনের বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বন্যা আর না বাড়লে বীজতলা তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তবে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আবার করা হবে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত বীজ সংরক্ষিত আছে, সেগুলো চাষিদের দেওয়া হবে। অন্যদিকে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে নাবি জাতের ধান চাষের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে এ বন্যার কারণে দেশে খাদ্য সঙ্কট হবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের (এনডিআরসিসি) দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসচিব মোছা. সুস্মিতা ইসলাম জানান, বন্যার সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনও তৈরি করা হয়নি। সব মন্ত্রণালয় তাদের সেক্টরের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তৈরি করছে। এগুলো তারা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে দেওয়ার পর চূড়ান্ত করা হবে।

এদিকে নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনায় গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ১০ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগস্ত হয়েছে বহু পরিবার। অনেক পরিবার এখনও পানিবন্দি। কৃষি সম্প্রসারণ ও প্রাণিসম্পদ অফিস জানিয়েছে, জেলায় ১ হাজার হেক্টরের বেশি ফসলের আউশ, পাট ও সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও প্রায় ৩০ হাজার গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ গবাদিপশু পানিবন্দি রয়েছে।

সিলেট ব্যুরো জানায়, বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ অঞ্চলের ৭৪ হাজার হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া সিলেট বিভাগে ৪০ হাজার পুকুর ও হ্যাঁচারি মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে আনুমানিক ১৪২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চলমান দুর্যোগে সিলেট বিভাগের তিন জেলায় প্রাণহানি হয়েছে ২২ জনের। সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হিমাংশ লাল রায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

অন্যদিকে বিভাগীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেট বিভাগের চারটি জেলার ৩৩টি উপজেলার ৪৫ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি। আর ৪ দশমিক ১৪ লাখের বেশি মানুষ ১২৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া বন্যাদুর্গতদের চিকিৎসার জন্য ৩০০টিরও বেশি মেডিকেল টিম কাজ করছে এবং ২৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং ১৩০৭ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন।