প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে সর্বোচ্চ যে সাজা হতে পারে

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ১৮, ২০২৪, ০৩:৫৪ অপরাহ্ণ
আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে সর্বোচ্চ যে সাজা হতে পারে

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণহত্যার বিচার হবে বিদ্যমান ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনেই। আইনটিতে ২০০৯ ও ২০১৩ সালে আনা সংশোধনীর কারণে যেকোনো সময়ে (আইনের আগে বা পরে) সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা সম্ভব। অপরাধে যুক্ত যেকোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংগঠনের বিচার করা ও শাস্তি দেওয়া যাবে। এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

কেউ প্রত্যক্ষ বা সরাসরি অপরাধে অংশ না নিলেও উসকানি বা নির্দেশ দেওয়া অথবা ঊর্ধ্বতনের দায়ে (সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি) সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পেতে পারেন। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় আমৃত্যু কারাদণ্ড বা ন্যায়সংগত মনে করলে অন্য শাস্তিও দিতে পারবেন ট্রাইব্যুনাল। অভিযোগ প্রমাণের ক্ষেত্রে সংবাদপত্র, সাময়িকী এবং ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং ফটোগ্রাফ, চলচ্চিত্র, টেপ রেকর্ডিং এবং এর আগে অন্যান্য উপকরণের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের ৩ ধারায় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক রাখা, নির্যাতন, ধর্ষণ, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা বা রাজনৈতিক, জাতিগত বা ধর্মীয় ভিত্তিতে নিপীড়নকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, উসকানি, সম্পৃক্ততা, নির্দেশদাতাকেও শাস্তির আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া আইনের ৪(১) ধারায় একক এবং যৌথ অপরাধের দায়দায়িত্বের জন্যও শাস্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

 

৪(২) ধারায় শুধু ঊর্ধ্বতনের দায়ে (সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি) শাস্তি হবে। ১৯(১) ধারায় অপরাধ প্রমাণের ক্ষেত্রে শুধু প্রযুক্তিগত নিয়ম দ্বারা আবদ্ধ হবে না; এবং এটি সর্বাধিক সম্ভাব্য ত্বরিত এবং অপ্রযুক্তিগত পদ্ধতি অবলম্বন এবং প্রয়োগ করবে। সংবাদপত্র, সাময়িকী এবং ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং ফটোগ্রাফ, চলচ্চিত্র, টেপ রেকর্ডিং এবং অন্যান্য উপকরণ সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে। অপরাধ প্রমাণ হলে আইনের ২০ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হবে। অবশ্য অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় আমৃত্যু কারাদণ্ড বা ন্যায়সংগত মনে করলে অন্য শাস্তিও দিতে পারবেন ট্রাইব্যুনাল।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি ‘দালাল আইন (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ’ জারি করা হয়। একই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি, ১ জুন ও ২৯ আগস্ট তারিখে তিন দফা সংশোধনীর পর আইনটি চূড়ান্ত হয়। দালাল আইন জারির পর ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৩৭ হাজার ৪৭১ দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৭৩টি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এদের বিচারকাজ চললেও ২২ মাসে মাত্র ২ হাজার ৮৪৮টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়। এ রায়ের মাধ্যমে ৭৫২ জন বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডিত হন। ১৯৭৩-এর ৩০ নভেম্বর দালালদের অনেককে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণার মাধ্যমে ২৬ হাজার ব্যক্তি মুক্তি পান। বাকিদের বিচার অব্যাহত থাকে। সাধারণ ক্ষমার প্রেসনোটে বলা হয়, ‘ধর্ষণ, খুন, খুনের চেষ্টা, ঘরবাড়ি অথবা জাহাজে অগ্নিসংযোগের দায়ে দণ্ডিত ও অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে ক্ষমা প্রদর্শন প্রযোজ্য হবে না।’ তবে অনেকের মতে, ১৯৭৩ সালের দালাল আইনে প্রায় ৩৪৬০০ অভিযুক্তকে ক্ষমা করা হয়।

এরপর ২০০৯ সালে আইনটির সংশোধনী এনে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা হয়। ওই সময়ে কোনো রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে আপিল করার সুযোগ না থাকায় ২০১৩ সালে আবারও সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষে আপিল করার বিধান যুক্ত করা হয়।

Sharing is caring!