প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

দেশে তিন কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ব্যাহত

admin
প্রকাশিত
দেশে তিন কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ব্যাহত

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

করোনার প্রাদুর্ভাবে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে তিন কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস এবং কভিড-১৯ মহামারির দুই বছর পার হওয়ায় গতকাল সোমবার প্রকাশিত ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

 

কভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সম্প্রতি ওমিক্রনের প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় সরকার নতুন করে ২৩ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।

 

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, ‘কভিড-১৯ মোকাবেলার ক্ষেত্রে স্কুল বন্ধ করতে হলে তা অবশ্যই শেষ অবলম্বন হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে করতে হবে। সংক্রমণের ঢেউ সামাল দিতে আমরা যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছি তার মধ্যে প্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষেত্রে সবার শেষে এবং খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে স্কুল থাকা উচিত। ’

 

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এ দফায় যদি এক-দুই মাস স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে খোলার পরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন স্কুলে আনতে হবে। প্রয়োজনে দুই শিফটের ব্যবস্থা করতে হবে। আর যদি দীর্ঘমেয়াদি ৮-৯ মাস বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে আমার পরামর্শ—আগামী বছরও শিক্ষার্থীদের একই শ্রেণিতে রাখতে হবে। স্কুল খোলার পর সপ্তাহে এক-দুই দিন ক্লাসে আনলে কোনোভাবেই শিক্ষার গুণগত মান রক্ষা করা সম্ভব হবে না। ’

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুরা গণনা ও সাক্ষরতার মৌলিক দক্ষতা হারিয়েছে। বৈশ্বিকভাবে পড়াশোনায় ব্যাঘাতের অর্থ হলো যে লাখ লাখ শিশু শ্রেণিকক্ষে থাকলে যে একাডেমিক শিক্ষা অর্জন করতে পারত, তা থেকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বঞ্চিত হয়েছে। যেখানে ছোট ও আরো বেশি প্রান্তিক শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

 

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে স্কুল বন্ধের কারণে পড়াশোনার ক্ষতি হওয়ায় ১০ বছর বয়সীদের ৭০ শতাংশই সহজ পাঠ্য পড়া বা বোঝার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি, যা মহামারির আগের সময়ের তুলনায় ৫৩ শতাংশ বেশি।

 

বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইউনিসেফ বলছে, স্কুল বন্ধ থাকার কারণে এর নেতিবাচক প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে। স্কুল বন্ধ থাকায় তা পড়াশোনার ক্ষতির পাশাপাশি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করেছে, তাদের নিয়মিত পুষ্টিপ্রাপ্তির উৎস কমিয়ে দিয়েছে এবং তাদের নিগ্রহের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়েছে। বিশেষ করে মেয়ে, কিশোর-কিশোরী এবং গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারীরা অধিক হারে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

 

ইউনিসেফের শিক্ষাবিষয়ক প্রধান রবার্ট জেনকিন্স বলেন, ‘বৈশ্বিক শিক্ষাব্যবস্থায় কভিড-১৯ সম্পর্কিত বিঘ্নের দুই বছর পূর্ণ হবে আগামী মার্চে। খুব সহজভাবে বললে, আমরা শিশুদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রায় অপূরণীয় মাত্রার ক্ষতি প্রত্যক্ষ করছি। তবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটাতে হবে এবং শুধু স্কুল পুনরায় খুলে দেওয়াই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়, পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শিক্ষার্থীদের নিবিড় সহায়তা প্রয়োজন। শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য, সামাজিক বিকাশ এবং পুষ্টি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে স্কুলগুলোকে শুধু শেখানোর নির্ধারিত গণ্ডির বাইরেও যেতে হবে। ’

 

ইউনিসেফ বলছে, ইথিওপিয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা স্বাভাবিক শিক্ষাবর্ষে যে পরিমাণ গণিত শিখতে পারত তার মাত্র ৩০-৪০ শতাংশ শিখতে পেরেছে বলে ধারণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, টেনেসি, উত্তর ক্যারোলাইনা, ওহাইও, ভার্জিনিয়া, মেরিল্যান্ডসহ অনেক অঙ্গরাজ্যে পড়াশোনার ক্ষতি পরিলক্ষিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, টেক্সাসে ২০২১ সালে গ্রেড ৩-এর দুই-তৃতীয়াংশ শিশুর তাদের গ্রেডের জন্য গণিতে দক্ষতা কম ছিল। ২০১৯ সালে এই হার ছিল অর্ধেক শিশু।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিলের বেশ কয়েকটি প্রদেশে গ্রেড ২-এর প্রতি চারটি শিশুর মধ্যে তিনটি পড়ার দক্ষতা অর্জন থেকে বিচ্যুত, যা মহামারির আগে ছিল প্রতি দুটি শিশুর মধ্যে একটি। দেশটিতে ১০-১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন জানিয়েছে, তাদের স্কুল পুনরায় খুলে দেওয়ার পর তারা আর স্কুলে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে না।

 

দক্ষিণ আফ্রিকায় স্কুলগামী শিশুদের শিক্ষাবর্ষে যে অবস্থানে থাকার কথা তার চেয়ে তারা ৭৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত পিছিয়ে আছে। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের জুলাইয়ের মধ্যবর্তী সময়ে প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে বলে জানা গেছে। স্কুল বন্ধ থাকার সময়ে বিশ্বব্যাপী ৩৭ কোটিরও বেশি শিশু স্কুলের খাবার থেকে বঞ্চিত হয়, যা কিছু শিশুর জন্য খাবার ও দৈনিক পুষ্টিপ্রাপ্তির একমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস।

সংবাদটি শেয়ার করুন।