প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

মানবতা এখন ফেরিওয়ালার ঝুড়িতে -শমশের আলম

admin
প্রকাশিত
মানবতা এখন ফেরিওয়ালার ঝুড়িতে -শমশের আলম

সরকারি অনুদানে ব্যক্তিত্ব জাহির করার এক লীলাক্ষেত্রের নাম বিয়ানীবাজার । এখানে অনেক নেতা আছেন যারা শেরে বাংলা এ,কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং বঙ্গবন্ধুকেও ছড়িয়ে গেছেন ।

সৃজনশীলের নব্য শিক্ষিতরা প্রতিদিন
আমাদের মেজাজটাকে ধোলাই দিচ্ছে।
ভাবের বহিঃপ্রকাশে আমরা বড় বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছি। গুরুচণ্ডালী দোষে আমাদের লেখার অর্থই বদলে যাচ্ছে ।

কথার মানের বদল হচ্ছে , আনুষ্ঠানিকতা আর বিশেষণের বাড়াবাড়িতে ভাষাগত চক্রান্তের শিকার হয়ে আমাদের মাঝে বৈষম্য বাড়ছে যা সামাজিক বিষণ্ণতার একটা বড় মাধ্যম হয়ে দাড়িয়েছে ।

বিয়ানীবাজারে এখন মানবতাবাদী নেতার অভাব নাই। চতুর্দিকে মানবতার বিপনি। রাস্তাঘাটে আজকাল অসংখ্য মানবতার ফেরিওয়ালাদের ছড়াছড়ি । উনারা এখন বাড়ীবাড়ী গিয়ে ২/৪ টাকায় কাগজের ডুঙ্গা ভরে মানবতা বিক্রি করেন ।

আগে গ্রামের মা-বোনেরা ফেরিওয়ালার কাছ থেকে উক্কার কাঠি, বৌলের মালা , তাগা, কবজ, তাবিজ , সুরমা , হজমি , কায়দা, ছিফারা , অজিফা , আয়না, চিরুনী তসবীগুটা ইত্যাদি কিনতেন ।

এখন আর তারা ঐগুলি কিনেন না । এখন কিনেন মানবতা । মানবতা এখন খুব সস্তা মাল। ফেরিওয়ালার ঝুড়ির ভিতরে এখন মানবতা ডুকে গেছে ।

এছাড়াও এখানে আছেন অনেক জীবন্ত কিংবদন্তি নেতা , জননন্দিত নেতা , জন-গণ-মন অধিনায়ক , মানবতার রাজা , জনসেবক , জনতার মানসপুত্র , বিয়ানী বাজারের ভূমিপুত্র , পঞ্চখন্ডের বরপুত্র , শতাব্দীর সেরা সন্তান, বিয়ানী বাজারের আলোর দিশারী , জনগনের সুলতান ইত্যাদি উপাধি বিশিষ্ট ডজন ডজন নেতা ।

আপনি যদি এই সব কিংবদন্তী নেতাদের সাথে সাক্ষাত করতে চান । তাহলে সোজা চলে যাবেন কোন কমিউনিটি সেন্টারে অথবা কোন খেলার মাঠে । এসব মহান নেতাদের দেখতে হলে এখন আর রেসকোর্সে যেতে হয়না । উনাদেরে এখন বিয়ে-শাদীর অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে মোরগের লড়াইর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তৃতায়ও দেখা যায় ।

গত ক’দিন আগে বিয়ানীবাজারের এক শিক্ষার্থী কোন একজন জনপ্রতিনিধিকে উদ্দেশ্যে করে লিখলো –” আপনি বিয়ানী বাজারের অবিসংবাদিত নেতা’ । লেখাটি দেখে আমার তো আক্কেল গুড়ুম । মনে মনে ভাবলাম বিয়ানীবাজারের একজন জনপ্রতিনিধি যখন ( undisputed leader) অবিসংবাদিত নেতা তাহলে বঙ্গবন্ধু , সোহরাওয়ার্দীকে কি বলি ?

নিশ্চয় আরও উচ্চমার্গের একটা বিশেষণের প্রয়োজন । এ চিন্তা আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলল। আমি আজ ক’দিন থেকে সেই শব্দটি খুঁজেই চলেছি কিন্তু এখনও পাইনি ।

কথা হল , একটা ভাষা তার সাবলীলতা ,
তার সৌন্দর্য, তার ব্যাকরণ হারায় না ২/১ জন মানুষের ভুল শব্দ প্রয়োগের কারনে ; সৌন্দর্য হারায় সমাজের শিক্ষক শ্রেণীর লোকেরা ভুলকে ‘ভুল’ না বলার কারনে ।

সংবাদটি শেয়ার করুন।