প্রজন্ম ডেস্ক:
কক্সবাজারের উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা বেড়েই চলেছে। এপিবিএন সূত্র জানায়, গত এক বছরে এসব আশ্রয়শিবিরে খুন হয়েছে ৪৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। এসব আশ্রয়শিবিরে ৩০৭টি মামলায় এক বছরে ৭২৫ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ আসামি আশ্রয়শিবিরের বাইরে উখিয়ার গহিন পাহাড়ের আস্তানায় অবস্থান করায় তাদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না পুলিশ।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে উখিয়ার ২৬টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৭ লাখ ৫৭৭ জন।
রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে উখিয়ার ২৬টি আশ্রয়শিবিরের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হলেও বর্তমানে শতাধিক স্থানে কাঁটাতার কেটে ফেলা হয়েছে। সশস্ত্র গোষ্ঠী সন্ধ্যার পর কাঁটাতারের ছেঁড়া অংশ দিয়ে আশ্রয়শিবিরে প্রবেশ করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, খুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ রোহিঙ্গার পাশাপাশি শরণার্থী সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত অর্ধশতাধিক এনজিও-আইএনজিওর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। প্রাণনাশের আশঙ্কায় এনজিও কর্মচারীরা বিকেল ৪টার আগেই আশ্রয়শিবির ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সম্প্রতি আশ্রয়শিবিরগুলোতে খুনের ঘটনা আগের চেয়ে কমছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। সর্বশেষ গেল বছরের ২১ অক্টোবর ভোর ৫টার দিকে ১৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি বসতবাড়িতে ঢুকে একই পরিবারের ৩ জনকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন ওই ক্যাম্পের আহমেদ হোসেন (৬০), সৈয়দুল আমিন (২৮) ও আসমা বেগম (১৩)।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোনো খুন-খারাবি বা সহিংসতা হয়নি। যদি প্রশাসন চায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তুচ্ছ ঘটনাও ঘটবে না।’
১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ সিরাজ আমিন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত দুই মাস ধরে কোনো ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। যার ফলে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে দুষ্কৃতকারীদের নিয়ন্ত্রণে সর্বদা সতর্ক অবস্থানে আছি।’
তবে গত এক বছরে আশ্রয়শিবিরে মাদক চোরাচালান বেড়েছে অনেক। বেকার রোহিঙ্গারা মাদক চোরাচালানসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়নের ৮ ও ১৪ তথ্যমতে, গত বছর বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ক্রিস্টাল মেথ (আইস), বিয়ার, গাঁজা ও চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়। মাদকের সঙ্গে বাংলাদেশি টাকা ও মায়ানমারের মুদ্রাও উদ্ধার করা হয়। ২০২৪ সালে মাদকের ১৩০টি মামলায় ১৫৮ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে এপিবিএন।
একই সঙ্গে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারও বাড়ছে আশ্রয়শিবিরে। রোহিঙ্গা শিবির থেকে গেল বছর ওয়ান শুটারগান, বিদেশি পিস্তল ও বিভিন্ন বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে এপিবিএন। গত এক বছরে অস্ত্রের ১০২টি মামলায় ১৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সন্ত্রাসীদের ধরতে গিয়ে পুলিশের ওপর হামলাও থেমে নেই। পুলিশ আক্রান্তের চারটি মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে মাদক, সন্ত্রাস নির্মূল ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি এপিবিএনের সাইবার ক্রাইম সেল ১৬২টি হারানো মোবাইল উদ্ধার ও বিকাশে ভুলক্রমে চলে যাওয়া ১ লাখ ১৯ হাজার ৮০০ টাকা উদ্ধার করেছে।
অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি পালংখালীর সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রবিউল হোসাইন বলেন, ‘ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গাদের অবাধে চলাচল বন্ধ করা না গেলে গুম-অপহরণ কোনোভাবেই রোধ করা সম্ভব না।’ ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গাদের অবাধে যাতায়াত ও বাসা ভাড়া বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
উখিয়া থানায় অফিসার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফ হোসাইন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা করতে এপিবিএনের পাশাপাশি আমরাও নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।’
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত দুই মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোনো বন্দুকযুদ্ধ ঘটেনি। টেকনাফে যে অপহরণের ঘটনা ঘটছে তা রোহিঙ্গাদের মধ্যে। স্থানীয় কেউ অপহৃত হয়নি। স্থানীয়দের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তারপরও আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছি।’
Sharing is caring!