প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

দেশি পোশাকের বিশ্বজয়

admin
প্রকাশিত
দেশি পোশাকের বিশ্বজয়

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

রক্তের দাগ শুকায়নি। চারদিকে হাহাকার। স্বজন হারানোর ব্যথা বুকে চেপেই ধ্বংসস্তূপের ওপর শুরু হয় বাংলাদেশ পুনর্গঠনের কাজ। সাড়ে ৭ কোটি মানুষ তো আর পেটে খিল দিয়ে বসে থাকতে পারে না! যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শুরু হলো জীবিকার সংগ্রাম। এভাবেই স্বাধীনতার পরের বছরেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করল বাংলাদেশ। শুধু টাকা থাকলে চলবে না, বিদেশ থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে আনতে হবে। রপ্তানি পণ্য নিয়ে যেতে হবে বৈশ্বিক বাজারে। সুতরাং পরের বছরে দেশ রপ্তানি করল প্রায় ৩৫ কোটি ডলারের পণ্য। ৯০ শতাংশের অংশীদারত্ব নিয়ে তালিকার শীর্ষে পাট ও পাটজাত পণ্য। এরপরই চা ও হিমায়িত খাদ্য।

আজকের বিশ্ব দাপিয়ে বেড়ানো তৈরি পোশাক তখনো দৃশ্যপটে প্রবেশ করেনি। এভাবে চলতে থাকল এগিয়ে যাওয়ার গল্প। একে একে বছর যায়, সবকিছু ছাপিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি বদলে দেওয়ার উপাখ্যানে রূপকথা হয়ে ওঠে বাংলাদেশের পোশাক খাত। ৫০ বছর আগে যে খাতের তালিকায় নাম ছিল না, সেটিই ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে নিয়ে এসেছিল ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলার, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২ লাখ ৯০ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। করোনার আঘাতে গত অর্থবছর রপ্তানি কিছুটা কমে ২ হাজার ৭৯৪ কোটি ডলারে নেমে এলেও মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশই তৈরি পোশাকের দখলে।

১৯৭৮ সালে বেসরকারি খাতের রিয়াজ গার্মেন্টসের মাধ্যমে তৈরি পোশাক রপ্তানির যাত্রা শুরু। প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে ১০ হাজার পিস শার্ট রপ্তানি করেছিল ফ্রান্সে। সেই চালানে ১ লাখ ৩০ হাজার ফ্রাঁ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে রিয়াজ গার্মেন্টস। তারপর আসে দেশ গার্মেন্টস। এই প্রতিষ্ঠান পোশাক রপ্তানি শুরু করে ১৯৭৯ সালে। জানা যায়, ওই সময়ে কাজ শেখানোর জন্য দেশ গার্মেন্টসের ১৩০ জনকে কোরিয়ায় পাঠানো হয়। যাদের বেশির ভাগই পরে একেকটি সফল পোশাক কারখানার মালিক হয়েছিলেন।

রিয়াজ ও দেশ গার্মেন্টসের দেখানো পথ ধরে গত ৫০ বছরে পোশাক খাত দেশের রপ্তানি আয়ের পুরো চিত্র বদলে দিয়েছে। পাঁচ দশকের পরিক্রমায় রপ্তানি আয় বেড়েছে ৯৬ গুণ। প্রায় ৪০ লাখ গ্রামীণ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান, নারীর আর্থসামাজিক ক্ষমতায়ন, আর অসংখ্য সহযোগী শিল্পের প্রসারসহ সমৃদ্ধির অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিচ্ছে খাতটি। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা দেশটিই এখন বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে লাল-সবুজের পতাকা ওড়াচ্ছে।

এরই মধ্যে অবশ্য অনেক চড়াই-উতরাই পার করেছে পোশাক খাত। ২০১২ সালের শেষের দিকে কোটা ব্যবস্থা উঠে যাওয়ার ধাক্কা, তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকাণ্ড, সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনা—খাতটির ভাবমূর্তি নাজুক করে তোলে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বলা যায়, এসব চ্যালেঞ্জে পোশাক খাত অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। এরপর আমেরিকা ও ইউরোপের দুটি ক্রেতা জোটের পরামর্শে পুরো খাতে বিরাট সংস্কার কার্যক্রম নিতে হয় বিপুল অর্থের বিনিয়োগে। এরপরই ঘুরে দাঁড়ায় খাতটি। গত অক্টোবর পর্যন্ত সবশেষ হিসাবে, বিশ্বের পরিবেশবান্ধব শীর্ষ দশে স্থান করে নেওয়া বেশির ভাগ কারখানাই এখন বাংলাদেশের।

সরকারের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে ও প্রণোদনার ফলে করোনার ধাক্কা দ্রুতই সামলে উঠেছে দেশের সবচেয়ে সফল এই খাত। সাময়িক কিছু ক্রয়াদেশ বাতিল হলেও পরবর্তী সময়ে ফিরতে থাকে সব অর্ডার। সক্ষমতার চেয়েও বেশি অর্ডার আসতে থাকে উদ্যোক্তাদের কাছে। বহু দেশ থেকে অর্ডার বাতিল হয়ে একের পর এক পোশাকের অর্ডারে ভাসছে বাংলাদেশ। ইউরোপ, আমেরিকার বড় বড় আউটলেট খুলে বাংলাদেশের পোশাকের জন্য বসে আছেন স্থানীয় ক্রেতারা। শোরুমগুলোতে শোভা পাচ্ছে মেড ইন বাংলাদেশ লেখা পণ্য।

এ বিষয়ে পোশাকমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাক খাতের সাফল্য বিস্ময়কর। একদিকে বিনিয়োগ বেড়েছে, কর্মসংস্থান তৈরি করেছে; অন্যদিকে যাদের কাজের অভিজ্ঞতা নেই—এমন অদক্ষ কর্মীদের রুটি-রুজি, আর্থসামাজিক সক্ষমতা তৈরি করেছে। এটা আর কোনো খাতে সম্ভব নয়। সুতরাং আমি বলব যে, ৫০ বছরের সবচেয়ে বড় প্রাপ্য এলডিসি থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার নেপথ্যেও এই পোশাক খাতের অবদান রয়েছে। আমরা রপ্তানি আয় ৩৪ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছি। এ বছর আশা করছি ৩৬ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করব। এই সবকিছু মিলিয়ে আমি বলব যে এটা অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করছে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন।