স্টাফ রিপোর্টার:
বাপ-দাদারা জুতা সেলাই করতেন তাঁদের পরে আমিও একই পেশায় কাজ করছি। এই পেশায় কাজ করে পাঁচ সদস্যের পরিবার এখন আর চলে না। অন্য কোনো কাজও করতে পারি না। মানুষের এখন টাকা হয়ে গেছে, কেউ ছেঁড়া জুতা সেলাই করে পরে না। আমাদের কেউ সাহায্যও করে না। আক্ষেপের সঙ্গে এই কথাগুলো বলছিলেন ২০ বছর ধরে মুচি পেশায় নিয়োজিত বিয়ানীবাজার পৌরশহরের রঞ্জন দাস।
বিয়ানীবাজার উপজেলার বিভিন্ন বাজারে রাস্তার পাশে দেখা যায় মুচি সম্প্রদায়ের লোকজনকে। ছেঁড়া জুতাকে চলার উপযোগী করে দিলেও তাঁদের ভাগ্যের নেই কোনো পরিবর্তন। খেয়ে না খেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনোরকমে চলছে তাঁদের জীবন।
উপজেলার চারখাই বাজারের এক পাশে বসে থাকা বেশ কয়েকজন মুচি সম্প্রদায়ের লোকের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, ‘আমাদের মাঝে অনেকেই এই পেশা এখন ছেড়ে দিয়েছেন, সারা দিন কাজ করে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় হয়। এই টাকা দিয়ে কীভাবে পাঁচ থেকে ছয়জনের পরিবার চালাব।’
বিয়ানীবাজারের বৈরাগী বাজার এলাকার কয়েকজন মুচি সম্প্রদায়ের লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুতা সেলাই কাজ করে এখন আর তাঁদের সংসার চলে না তাই অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজ বেছে নিয়েছে। যারা ছোটবেলা থেকে এ কাজ করে আসছেন এখন অন্য কোনো কাজ করতে পারেন না শুধু তাঁরাই এখনো এই কাজ করছেন। এখন আর কেউ তাঁদের সন্তানদের এই কাজ শেখান না।
মুচি জন্টু দাস বলেন, ‘৪০ বছর ধরে এই কাজ করে সংসার চালিয়েছি কিন্তু এখন আর পারছি না, সারা দিন কাজ করে বাড়িতে যাওয়ার সময় চাল-ডাল নিয়ে যেতে পারি না’
বিয়ানীবাজার উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে মুচি সম্প্রদায়ের লোকের মধ্যে ঋণ বিতরণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে তেমন সাড়া মিলেনি। এই পেশায় জড়িতদের মধ্যে কাউকে তেমন কোন অনুদানও প্রদান করা হয়নি। তবে আশার কথা, বিয়ানীবাজার পৌরশহরসহ উপজেলার চারখাই, দুবাগ এলাকায় বড় কয়েকটি জুতা তৈরীর প্রতিষ্টান শুরু করেছেন মুচি সম্প্রদায়ের লোকজন। পৌরশহরের হেমলতা সুজ একসময়কার বহু স্মৃতিবিজড়িত ব্যবসা প্রতিষ্টান। এই প্রতিষ্টানে আড্ডা দেননি, এমন লোকের সংখ্যা খুব কম। এখন সেই প্রতিষ্টানই গোটানোর পথে।
উপজেলায় কতজন লোক এ পেশায় জড়িত আছে, তার কোন হিসাব নেই কারো কাছে।
সংবাদটি শেয়ার করুন।