প্রজন্ম ডেস্ক:
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চসমূহে কাগজমুক্ত বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ বছর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বেঞ্চসমূহেও এই কার্যক্রম শুরু করা হবে।
রবিবার (৫ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি আহমেদ সোহেলের একক কোম্পানি বেঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এর আগে ৩১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নতুন বছর কাগজমুক্ত বিচারকাজ শুরু করার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের প্রত্যাশার কথা জানানো হয়।
বিষয়টিকে নতুন যুগে প্রবেশ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট বেঞ্চের বিচারপতি। পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও একটি নতুন অধ্যায় শুরু হলো বলে জানান আইনজীবীরা।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ ঘোষিত রোডম্যাপের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিচার সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য বিভিন্নমুখী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সম্পূর্ণ কাগজমুক্ত বিচারিক কার্যক্রম শুরু হলো।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব তত্ত্বাবধায়ন ও উদ্ভাবনে উক্ত বেঞ্চের সকল কাগজাদি অনলাইনে জমা দেওয়ার অনলাইন প্লাটফর্ম প্রস্তুত করা হয়। চলতি ২০২৫ সালে পর্যায়ক্রমে সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বেঞ্চসমূহেও পেপার ফ্রী কার্যক্রম পরিচালনায় প্রধান বিচারপতির পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আশা করেন দীর্ঘ মেয়াদে দেশের জেলা আদালতসমূহেও সম্পূর্ণ পেপার ফ্রী বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে ।
এই কার্যক্রমের প্রথম দিনে দুটি মামলার আবেদন অনলাইনে জমা পড়েছে বলে এজলাসে বসে আইনজীবীদের জানান বিচারপতি।
জমা পড়া দুটি আবেদনের একটির আইনজীবী মো. জামিল খান বলেন, অনলাইনে একটি ম্যানশন স্লিপ জমা দিয়েছেন তিনি। জমা দেওয়ার জন্য আরও কয়েকটি আবেদন প্রস্তুত আছে।
বিচারপতি আহমেদ সোহেল শুনানির সময় আইনজীবীদের উদ্দেশে অনলাইনে মামলা ফাইল করার পরামর্শ দেন। এরপর তালিকায় থাকা মামলা গুলোর স্বাভাবিক শুনানি করা হয়।
তিনি আইনজীবীদের বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি ভিডিও দেয়া আছে। এতে কীভাবে ফাইল করতে হবে তা বলা হয়েছে। সবাই এতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন।
করোনার সময় অনলাইনে শুনানির বিষয় স্মরণ করিয়ে বিচারপতি বলেন, তখন প্রথম প্রথম ঝামেলা মনে হলেও পরে আইনজীবীরা এতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন।
মামলা করার ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার বিষয়ে অ্যাডভোকেট মো. জামিল খান বলেন, সংশ্লিষ্ট সেকশন থেকে প্রথমে একটি পাসওয়ার্ড নিতে হবে। এরপর নিজের একটি আইডি খুলতে হবে। কোনো মামলা ফাইল করার সময় আবেদনের অংশটি পিডিএফ করে নিজের আইডি দিয়ে সংশ্লিষ্ট সেকশনে ঢুকে আপলোড করতে হবে। এরপর ওই পাতার প্রিন্ট কপি নিয়ে আবেদনের অন্যান্য কাগজসহ এফিডেভিট করতে হবে। পরে সেই এফিডেভিট করার ফাইল নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোর্টে শুনানি করতে হবে। শুনানি এখন এজলাসে হবে। পরে অনলাইনে করার ব্যবস্থা হলে করা যাবে।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাভোকেট ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, সকল কাগজাদি অনলাইনে জমা দেওয়ার অনলাইন প্লাটফর্ম প্রস্তুত করে পেপার ফ্রী বিচারিক কার্যক্রম শুরু একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিচার বিভাগকে যুগোপযোগী, জনগণের হয়রানি লাঘবসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং বিচার বিভাগকে প্রভাবমুক্ত করতে রোডম্যাপ ঘোষণা নজিরবিহীন উদ্যোগ। রোডম্যাপের আলোকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন অগ্রগতি আইনজীবী সমাজসহ জনগণের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।
গত ১১ আগস্ট শপথ গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বচ্ছতা ও প্রাতিষ্ঠানিক উৎকর্ষতা আনয়নের মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রয়াস হিসেবে তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন।
Sharing is caring!