প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
১৯শে রমজান, ১৪৪৫ হিজরি

জকিগঞ্জ-সিলেট সড়কে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ, কর্মসূচির ডাক

admin
প্রকাশিত
জকিগঞ্জ-সিলেট সড়কে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ, কর্মসূচির ডাক

 

জকিগঞ্জ প্রতিনিধি:

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহন মালিকদের দাবির মুখে গণপরিবহনে ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়েছে বিআরটিএ। সিলেট-জকিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে নতুন করে গণপরিবহনে শুরু হয়েছে ভাড়া নৈরাজ্য। গণপরিবহনে ভাড়া বাড়লেও সেটা কার্যকর শুধু দূরপাল্লা ও ডিজেলচালিত বাসের ক্ষেত্রে। সিএনজিচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো হয়নি ভাড়া। এমনটাই জানিয়েছেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার।

কিন্তু সিএনজিচালিত গণপরিবহনে ভাড়া না বাড়লেও জকিগঞ্জ-সিলেট সড়কে যাত্রীদের জিম্মি করে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি হারে ভাড়া আদায় করছে গণপরিবহনের শ্রমিকরা। অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করায় এখন পর্যন্ত একাধিকজনের সঙ্গে হেলপারের হাতাহাতির খবর পাওয়া গেছে। যাত্রীদের গন্তব্য কাছাকাছি হলেও গাড়িতে উঠলেই বেশী ভাড়া নিচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। কিন্তু অতিরিক্ত ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানালেই বেঁধে যায় ঝগড়া। গণশুনানী ছাড়াই ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচির ডাক দিয়েছে সাধারণ মানুষ। ফুঁসে উঠেছে যাত্রীরা। রবিবার জকিগঞ্জ শহরে সর্বস্থরের জনতা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেবে বলে জানা গেছে।

একাধিক যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের ক্ষোভের কথা।

যাত্রীরা বলেন, আগে সিলেট থেকে শেওলা-জকিগঞ্জ ৬০ কিলো সড়কে ভাড়া ছিলো ৭০ টাকা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৮ টাকায়, রতনগঞ্জ-আটগ্রাম ৭৪ কিলো সড়কে ভাড়া ৮৫ টাকা এখন ১৩৩ টাকা, জকিগঞ্জ-কালিগঞ্জ ৯০ কিলো সড়কে আগে ১০৫ টাকা ছিলো এখন ১৬২ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তাছাড়াও আগে যেখানে ৮ টাকা ভাড়া ছিলো এখন একই দূরত্বের ভাড়া ১৩ টাকা নেয়া হচ্ছে। গ্যাসচালিত ছোট-বড় গাড়িগুলোতেও ভাড়া নৈরাজ্য চরম মাত্রায় পৌছেছে। ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা না করায় ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে। বাড়তি ভাড়া নিয়ে কেউ কেউ আবার প্রশ্ন তুলছেন- সব চাপ যাত্রীদের ওপর কেন?

যাত্রীরা আরও জানান, ডিজেলচালিত গাড়ীতে বিআরটিএ ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ালেও সিলেট-জকিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করে যাচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিদিনই মারামারির ঘটনা ঘটছে। প্রতিটি গণপরিবহনেই ভাড়া নৈারজ্য নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। পরিবহন শ্রমিকদের হাতে নাজেহাল হচ্ছেন যাত্রীরা। অতিরিক্ত ভাড়া ইস্যু নিয়ে জকিগঞ্জে আইন শৃঙ্খলার অবনতিও ঘটতে পারে। তাছাড়াও গ্যাসচালিত ছোট বড় গণপরিবহনেও শ্রমিকদের দৌরাত্ম্য চরম আকার ধারণ করেছে। ব্যাটারী চালিত অবৈধ গাড়ীগুলোতেও বেড়েছে ভাড়া। জকিগঞ্জে প্রায় ১০/১৫ শতাংশ গণপরিবহন ডিজেলচালিত হলেও ভাড়া বৃদ্ধির পর থেকে চালক ও হেলপার তাদের গাড়ি সিএনজিচালিত নয় বলে দাবী করেন। কিন্তু গাড়ির পেছনের অংশের নিচে সিএনজি সিলিন্ডার (বোতল) দেখা যায়।

বাসে চলাচলকারী একাধিক যাত্রীরা জানিয়েছেন, বাসের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে ভোগান্তিরর একটা অধ্যায় শুরু করেছে সরকার। জকিগঞ্জ-সিলেট সড়কে ডিজেল ও সিএনজিচালিত গণপরিবহনে নেয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। এরমধ্যে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়। যে যাত্রী সিটে বসে যায় তার ভাড়া যেমন অতিরিক্ত আর দাঁড়িয়ে যে যায় তার ভাড়াও একই। আবার গাড়ির উপর মালামালও বহন করা হয়। তাহলে পরিবহন নেতা-শ্রমিকরা সরকারের নিয়ম কিভাবে মানছে? সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন। সাধারণ যাত্রীদের স্বার্থে জেলা শহরের সবচেয়ে দূরের উপজেলা জকিগঞ্জে বিআরটিএর বাস সার্ভিস চালু করতে উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে সাধারণ মানুষের সমস্যা লাঘব হবেনা।

বাস যাত্রী আব্দুশ শহীদ বলেন, বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কোনটি ডিজেলচালিত আর কোনটি সিএনজিচালিত সেটা চিহ্নিত করে দিতে হবে। ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্টের অভিযান প্রয়োজন। গাড়িতে বেশী যাত্রী তোলা হলে ও মালামাল বহন করলে বর্ধিত ভাড়া কেন দিতে হবে? জকিগঞ্জ-সিলেট সড়কে ভাড়া নৈরাজ্য ভাঙতে হলে জনগন সোচ্চার হতে হবে।

নতুন বাস ভাড়ায় খুশি নন, এমন একজন শিক্ষার্থী হাসান আহমদ। তিনি আগে বাসে ১০ টাকার ভাড়া যতটুকু যাতায়াত করতেন এখন সেই জায়গায় ১৬ টাকা দিতে হয়। তার দাবী বাস ভাড়া বাড়িয়ে সরকার একটা অন্যায় করেছে। পরিবহন মালিকদের দাবি-দাওয়া আমাদের পকেটের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে গণশুনানীর মাধ্যমে নতুন করে ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণ জনগন এই ভাড়া প্রত্যাখান করেছে।

আরেক যাত্রী খালেদ আহমদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যাত্রীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে গলা কাটা ভাড়া নির্ধারণের ফলে দেশের নিম্ন ও মধ্য আয়ের জনসাধারণকে আরও একদফা গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। জকিগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়কে যেভাবে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, তা জুলুম বলা চলে। সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নতুন করে গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারন না করলে গাড়ী ভাড়া নিয়ে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। গাড়ী ভাড়া নিয়ে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ চান তিনি।

জকিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি আবুল খায়ের চৌধুরী বলেন, বাস মালিক সমিতি ইচ্ছেমত ভাড়া নির্ধারণ করেছে। গলাকাটা ভাড়া সাধারণ মানুষ মেনে নিবেনা। এ নিয়ে অনেক জায়গায় সমস্যা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গণশুনানি করে অথবা যাত্রী প্রতিনিধির সঙ্গে সমন্বয় করে ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা প্রয়োজন। নতুবা নৈরাজ্য বন্ধ হবেনা। নতুন ভাড়া নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধান না হলে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে পারে।

তিনি বলেন, সরকার জকিগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিএ বাস চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে যাত্রীদের সমস্যা অনেকটা লাঘব হবে।

এ নিয়ে তিনি বিআরটিএ’র সিলেটের ম্যানেজার (অপারেশন) জুলফিকার আলীর সাথে কথা হয়েছে। জুলফিকার আলী জানিয়েছেন, বর্ধিত ভাড়ার চাইতে অনেক কম ভাড়ায় বিআরটিএর বাস দিয়ে সার্ভিস চালু করা সম্ভব হবে। সকলে সহযোগিতা করতে জকিগঞ্জ সড়কে ৪/৫টি বাস দেয়া যেতে পারে।

বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে জানান, বাসের কোন চালক কিংবা শ্রমিক যাত্রীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া গ্রহণের অভিযোগটি সঠিক নয়। সরকার নির্ধারিত ভাড়া গ্রহণ করা হচ্ছে। এরপরও যদি কেউ বাড়তি ভাড়া গ্রহণ করে থাকে তাহেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নতুন ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা শনিবারে বৈঠক ডেকেছি। বৈঠকে চেষ্ঠা করবো যাত্রীদের সুবিধার্তে কিছু ভাড়া কমানো যায় কি না। যদি সবাই সম্মতি দেন তাহলে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে কিছুটা ভাড়া কমানো হতে পারে।

এ ব্যাপারে সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য ড. হাফিজ আহমদ মজুমদার বলেন, নতুন ভাড়ার কারণে জনগনের উপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া গ্রহণ বন্ধ করা প্রয়োজন। সহনশীল ভাড়া গ্রহণ করতে তিনি আহবান জানিয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন।