প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বনাথে বাজারের সালিশ, মামলা খেলেন বিএনপি নেতারা

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ১৪, ২০২৪, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ
বিশ্বনাথে বাজারের সালিশ, মামলা খেলেন বিএনপি নেতারা

স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটের বিশ্বনাথের মাহতাবপুর মৎস্য আড়তের দখল চান অন্তর্বর্তী ও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতারা। এ নিয়ে কয়েক দফা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনার পর আবারও বিবদমান দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে। এই সমস্যা সমাধানে সালিশ করতে গিয়ে এক পক্ষের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি গউছ আলী ও সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

বাজারের দখল নিতে চাওয়া দু’পক্ষের একদিকে আছেন মাহতাবপুরের বাসিন্দা ও মাছ বাজারের ব্যবসায়ী, অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতা বশির উদ্দিন। অন্যদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির পক্ষে রয়েছেন একই গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য ও বাজারের শাহপরান মৎস্য আড়তের পরিচালক হেলাল উদ্দিন।

মাহতাবপুর মৎস্য আড়তের দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একাধিকবার হামলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষ হয়েছে দু’পক্ষের মধ্যে। এ নিয়ে উচ্চ আদালতসহ সিলেট ও বিশ্বনাথ থানায় পরস্পরের বিরুদ্ধে পাঁচ থেকে ছয়টি করে মামলাও হয়েছে। এদিকে এই সমস্যা সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করতে গিয়ে বশির উদ্দিনের পক্ষে রায় দেওয়ায় স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন অন্য পক্ষের হেলাল উদ্দিন। ৮ অক্টোবর সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩ নম্বর আমলি আদালতে বিএনপির সভাপতি গউছ আলী ও সম্পাদক লিলু মিয়াকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন হেলাল।

পুলিশ ও সমবায় অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মৎস্য আড়তের সাবেক কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও সভাপতি আব্দুল মান্নান এবং সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক মুল্লা তারা তাদের পদ এবং বাজারের দখল ছাড়তে নারাজ। নিজেদের জোর বাড়াতে হেলাল উদ্দিনকে নিয়ে দল গঠন করেন তারা। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে বিশ্বনাথ থানা, সিলেট আদালত, এমনকি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টেও একাধিক মামলা করেন তারা।

৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে মাছ বাজার থেকে হেলাল পক্ষকে সরিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী কমিটির সভাপতি ফখর উদ্দিনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় সেনা সদস্যদের সঙ্গে বিশ্বনাথ থানা পুলিশও উপস্থিত ছিল। ২৫ আগস্ট মাছ বাজারে বশির পক্ষের কয়েকটি দোকানে হামলা চালায় হেলাল উদ্দিনের লোকজন। তারপর বশির উদ্দিনের অনুসারীরাও পাল্টা হামলা চালায়।

এ নিয়ে সালিশ বৈঠকের ডাক দেওয়া হলে উভয় পক্ষ ৫ লাখ টাকা করে জমা করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকদের কাছে। পরে কয়েক দফা বৈঠকের তারিখ পরির্বতন করিয়ে ২১ সেপ্টেম্বরের সালিশ বৈঠকে উপস্থিত না হওয়ায় হেলাল পক্ষের বিরুদ্ধে রায় দেন সালিশকারীরা।

এ ঘটনায় আমানতের ৫ লাখ টাকা বাজেয়াপ্তের নামে আত্মসাতের অভিযোগ তোলেন হেলাল উদ্দিন। পরে ৮ অক্টোবর বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের মামলা করেন হেলাল উদ্দিন।

অন্তর্বর্তী কমিটির সভাপতি ফখর উদ্দিন ও সাবেক সভাপতি জমির উদ্দিনের অভিযোগ, সিলেটের জেলা সমবায় কর্মকর্তা চন্দন দত্ত, স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে চারবার মাহতাবপুর মৎস্য আড়ত অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে দেন। তবে তা মানতে নারাজ মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক মুল্লা। দীর্ঘ দুই বছরের ৭২ লাখ টাকা ও হিসাবপত্র বুঝিয়ে দেননি তারা। টাকা ও খাতাপত্র উদ্ধারে একাধিকবার তারা স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।

ব্যবসায়ী বশির উদ্দিন জানান, হেলাল উদ্দিন জোরপূর্বক বাজার দখলে নিতে বাড়িঘর ও দোকানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা এবং লুটপাট চালিয়েছে। এতে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। হেলাল পক্ষের হাসনাত নামের এক ব্যক্তির করা মামলার রায় তাদের পক্ষে গিয়েছে। এ ছাড়া জেলা সমবায় কার্যালয়ে ডিসপিউট মামলা ও বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ে করা আপিল মামলা এবং জেলা জজ আদালতে দায়ের করা মামলার রায়ও তাদের পক্ষে। সর্বশেষ সালিশের রায়ও তাদের পক্ষে এসেছে। এদিকে ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিনের ভাষ্য, মাছ বাজারে তার দোকান ও বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বশির উদ্দিনের লোকজন। আর মামলার রায় বশির পক্ষে নয়, সব রায় তাদের পক্ষে পেয়েছেন।

সর্বশেষ সালিশ বৈঠকের রায় সম্পর্কে তিনি জানান, রোগী নিয়ে ঢাকায় থাকার পরও সালিশকারীরা বেআইনিভাবে তাঁর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। যে কারণে তিনি বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের মামলা করেছেন।

বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সভাপতি গউছ আলী ও সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া জানান, সালিশ বৈঠকের একাধিক তারিখ পরিবর্তনের পরও হেলাল উদ্দিন পক্ষ উপস্থিত না হওয়ায় এবং আইনিভাবে সব কাগজপত্র বশির উদ্দিন ও তার লোকজনের পক্ষে থাকায় সালিশকারীরা হেলাল ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন।

বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুবেল মিয়া জানান, মাহতাবপুর মাছ বাজার নিয়ে উভয় পক্ষের মামলা চলমান।
এদিকে অন্তর্বর্তী কমিটি বৈধ জানিয়ে সিলেট জেলা সমবায় অফিসার চন্দন দত্ত জানান, মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এ পর্যন্ত চারটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ফখর উদ্দিনের কমিটির মেয়াদ আরও কিছুদিন আছে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুনন্দা রায় জানান, মাহতাবপুর মৎস্য আড়তের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Sharing is caring!