স্টাফ রিপোর্টার:
ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করায় বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালকে এজলাসে ডিম ছুড়ে মেরেছেন একজন আইনজীবী। একপর্যায়ে ওই বিচারপতি এজলাস ছেড়ে নেমে যান এবং পরে আর বেঞ্চে বসেননি।
আজ বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের বিরতির পর বিচারকাজ কাজ শুরু হয় বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চে। দুপুর আড়াইটার দিকে ১২ নম্বর আইটেমের শুনানি করছিলেন আইনজীবী মোশারফ হোসেন। এসময় কয়েকজন আইনজীবী আদালতে প্রবেশ করেন।
একজন আইনজীবী ডায়াসের সামনে গিয়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি একজন বিচারপতি হয়ে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। অনেক বছর সহ্য করেছি। আপনি এখনো যদি ওই চিন্তাভাবনা পোষণ করেন তাহলে আপনার বিচারকাজ করার অধিকার নাই। আপনার বসা ঠিক হবে না। আপনি নেমে যান। এ সময় পেছন থেকে বিচারপতির দিকে ডিম ছোড়া হয়। তবে ডিম এজলাসের কাঠে গিয়ে লাগে। পরে এজলাস ছেড়ে চলে যান দুই বিচারপতি।
এর আগে দুপুর ২টার দিকে কয়েকজন আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সি মশিয়ার রহমানের নেমপ্লেটে রং মেখে দেন। পরে ওই নেমপ্লেট খুলে ফেলেন তার অফিসের কর্মকর্তারা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি নারায়ণগঞ্জের জেলা জজ থাকাবস্থায় আদালতের সবাইকে টুঙ্গিপাড়ায় যেতে বাধ্য করেছিলেন।
জিয়াউর রহমানকে নিয়ে যা বলেছিলেন বিচারপতি আশরাফুল কামাল:
২০১৬ সালে ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল তার পর্যবেক্ষণে বলেন-মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাকবাকুম করে ক্ষমতা নিয়ে নিলেন, তথা রাষ্ট্রপতির পদ দখল করলেন। একবারও ভাবলেন না, তিনি একজন সরকারি কর্মচারী। সরকারি কর্মচারী হয়ে কীভাবে তিনি আর্মি রুলস ভঙ্গ করেন। ভাবলেন না তার শপথের কথা। আমরা জানি ডাকাতরা সংঘবদ্ধভাবে ডাকাতি করে। ডাকাতদের যে নেতৃত্ব দেয় তাকে ডাকাত সর্দার বলে। ডাকাতি করার সময়ে ডাকাতরা বাড়িটি বা ঘরটি কিছু সময়ের জন্য অস্ত্রের মুখে দখল করে এবং মূল্যবান দ্রব্যাদি লুণ্ঠন করে।
বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান গংরা দেশে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকা সত্ত্বেও অস্ত্র এবং অবৈধ কলমের খোচায় নির্বাচিত জাতীয় সংসদকে ভেঙে ডাকাতদের মতো অবৈধভাবে জোরপূর্বক জনগণের ক্ষমতা ডাকাতি করে দখল করেন।
রায়ে আরও বলা হয়, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান শুধু জাতির পিতা ও তার পরিবারের এবং জাতীয় চার নেতা হত্যাকারীদের শুধু দোসরই হননি বরং তিনি জাতির পিতা ও তার পরিবারের হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করেছেন রাষ্ট্রদূত, সংসদ সদস্য ইত্যাদি বানিয়ে।
তিনি আরও জঘন্য যে কাজটি করেন তা হলো তিনি জনগণের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা ও তার পরিবারের হত্যাকারীদের হত্যার বিচার বন্ধ করে দায়মুক্তি আইন প্রণয়ন করেন। অর্থাৎ তিনি জাতির পিতা ও তার পরিবারের হত্যাকে এই দায়মুক্তি আইন দ্বারা সমর্থন দিয়ে প্রমাণ করেন তিনিও জাতির পিতা ও তার পরিবারের হত্যাকারী এবং জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদেরই একজন।
Sharing is caring!