স্টাফ রিপোর্টার:
কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে দেশের জাতীয় নির্বাচনী ট্রেনের হুইসেল বেজে উঠেছে। সামনে যতই প্রতিবন্ধকতা থাকুক, এই ট্রেন সবকিছু মাড়িয়ে গতিবেগ বাড়িয়ে, স্টেশন ছাড়িয়ে ছুটে চলবেই। গত বহুবছর থেকে ট্রেনকে বিপথে চালনা করে দূর্ঘটনায় ফেলা হয়েছে। তবে ছাত্র-জনতার ধাওয়ায় বিপথে ট্রেন পরিচালনাকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে ক্রমশ। আর এমন স্বাচ্ছন্দ্যকর পরিবেশ বইতে থাকায় একটু আগেভাগেই নির্বাচনী ট্রেনে ওঠে পড়েছে বিয়ানীবাজারের বিএনপি-জামায়াত।
সিলেট-৬ আসনের অন্তর্গত বিয়ানীবাজার উপজেলায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেছেন। স্থানীয় জনগণকে সংগঠিত করে, জনগণের ভাষা বোঝার মধ্য দিয়ে কৌশলী প্রচারণায় অনেকটা প্রতিদ্বন্ধিতায় নেমেছেন বিএনপি-জামায়াতের আগ্রহীরা। যদিও ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরই বিয়ানীবাজারে নির্বাচনী তোড়জোড় শুরু হয়। আর এতে প্রতিদ্বন্ধিতার মাত্রা যোগ করেন নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
তবে এখনো পর্যন্ত দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি-জামায়াত ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর প্রচারণা দেখা যায়নি। বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ নির্বাচনী আসন থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করার জন্য বিএনপি থেকে বিগত দিনে ধানের শীষের প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর জামায়াতে ইসলামী থেকে ঢাকা মহানগরী (উত্তর) এর সভাপতি ও ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন কার্যক্রম শুরু করেছেন।
গত শুক্রবার একই দিনে উপজেলার পৃথকস্থানে তিনটি সভা আহবান করে বিএনপি-জামায়াত। সকালে পৌরশহরে অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীর কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিয়ানীবাজারের আগামী দিনের উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী থেকে ঢাকা মহানগরী (উত্তর) এর সভাপতি ও ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। তিনি এই আসনের উন্নয়ন নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা জানিয়ে দেন।
এদিকে সন্ধ্যায় লাউতার বারইগ্রাম বাজারে সভা করেন সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনিও বিগত সরকারের সমলোচনার পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের প্রতি ইঙ্গিত করে বিয়ানীবাজারে উন্নয়নের নামে লুটপাট করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। একই সময়ে চারখাই বাজারে পৃথক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও জেলার সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম। তিনিও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
অপরদিকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিগত দিনে ধানের শীষের প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী বিয়ানীবাজার পৌরশহরের দক্ষিণ বাজারে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। অনেকটা শে-ডাউনের আদলে তিনিও নিজের অবস্থান জানান দেন।
বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জে কোন রাজনৈতিক দলের একক আধিপত্য নেই। বিগত দিনের জাতীয় নির্বাচনে এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীও বিজয়ী হয়েছেন। সর্বশেষ আমি-ডামির নির্বাচনেও নৌকার প্রার্থীকে তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতায় পড়তে হয়।
জানা যায়, শুধুমাত্র জাতীয় নির্বাচন নয়, আসন্ন উপজেলা (যদি বিলুপ্ত না হয়), পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরেও মাঠে কাজ করছেন বিএনপি-জামায়াতের সম্ভাব্য আগ্রহী প্রার্থীরা। উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে সামনে রেখেও দল গোছানোর কাজ করছেন দুই রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীলারা। এক্ষেত্রে একাধিক বিকল্প প্রার্থীকেও কৌশলে ভোটারের সাথে মেশানোর চেষ্টা চলছে।
জাতীয় নির্বাচনে তোড়জোড় নিয়ে জানতে চাইলে সুজন বিয়ানীবাজার শাখার সভাপতি এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন বলেন, আসন্ন নির্বাচন সুষ্টু হবে-আশা করছি। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে আসবে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবীতে গণতন্ত্রকামী মানুষের বিপ্লব কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে রাজনৈতিক দলগুলো। এক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত মাঠ গোছানোর কাজটি আগেই সেরে রাখতে চায় বলে মনে হচ্ছে।
কমিউনিষ্ট পার্টির বিয়ানীবাজারের সভাপতি এড. আবুল কাশেম জানান, মানুষের ভোটের প্রহর গুণছে। রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের দাবীর পাশাপাশি ঘর গুছিয়ে রাখছে। এটা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য।
Sharing is caring!