প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীর এত সম্পদ!

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২১, ২০২৪, ০৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ
প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীর এত সম্পদ!

স্টাফ রিপোর্টার:
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও পটুয়াখালী-৪ আসনের সা‌বেক সংসদ সদস্য মহিববুর রহমান মহিব। তার ক‌লেজ‌শিক্ষক স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রেখার নামে রয়েছে শত‌কো‌টি টাকা মূ‌ল্যের প্রায় ৩০ একর জমি। এই জ‌মির তথ্য মহিববুর রহমান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দা‌খিল করা হলফনামায় এড়ি‌য়ে গে‌ছেন।

হলফনামা অনুযায়ী ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় তার দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছিলেন প্রায় ৩৩ লাখ টাকা।
স্ত্রীর মূল আয়ের উৎস ছিল ক‌লেজশিক্ষক হিসেবে, বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল সোয়া তিন লাখ টাকা। অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের পাঁচ বছরে স্ত্রী রেখার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় তিন কোটি টাকা। হলফনামার তথ্য অনুযায়ীই এ সময় তার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২০৯৩ শতাংশ।

সাগরপারের কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন পটুয়াখালী-৪।
পর্যটননগরী কুয়াকাটা, দেশের তৃতীয় পায়রা সমুদ্রবন্দর, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও শেরেবাংলা নৌঘাঁটিসহ মেগাপ্রকল্পে ভরপুর এই আসনটি। এই সংসদীয় আসনে সংসদ সদস্যের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হয়ে মহিববুরের ভাগ্য বদলে যায়। পিছিয়ে নেই তার স্ত্রীও।
স্বামী এমপি হওয়ার পর গত পাঁচ বছরে লাখপতি থেকে হয়েছেন কোটিপতি। আয় ও সম্পদ দুটিই বেড়েছে তাদের।

আয়ের উৎস
মন্ত্রীর স্ত্রী আলহাজ জালাল উদ্দিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। কলেজের অফিস সহায়ক আলমগীর হোসেন জানান, তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়েছেন।
তার বেতন সর্বসাকল্যে ৩৮ হাজার টাকার মতো। নি‌য়োগ বাণিজ‌্য, বালু ভরাট, জলমহাল ইজারা, পাওয়ার প্লান্টের ভাঙ্গারির ব‌্যবসা কর‌তেন রেখা। ধুলাসার ইউনিয়নের সাবেক এক চেয়ারম্যান জানান, স্কুল-কলেজের চাকরি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ও টিআর কাবিখার কাজ না করে পুরো টাকা লুটপাট করে নিয়েছেন তিনি। সেই অর্থেই কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দরের মতো জায়গায় এত জমি কিনেছেন তিনি।

সম্পদ বেড়েছে ২০৯৩ শতাংশ
টিআইবি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের তিনটি ক্যাটাগরিতে পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. মহিববুর রহমান চতুর্থ শীর্ষ ছিলেন। ওতে দেখানো হয়েছে, ২০১৮ সালের তুলনায় মন্ত্রী মহিববুরের স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের আয় বেড়েছে ৬৭৯.৯৩ শতাংশ। একইভাবে একাদশ সংসদের এমপিদের পাঁচ বছরে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির শীর্ষ পাঁচে ছিলেন মহিববুর রহমান। ২০১৮ সালের তুলনায় তার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১০২৪.৭৪ শতাংশ এবং একাদশ জাতীয় সংসদের এমপিদের স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের পাঁচ বছরে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে চতুর্থ শীর্ষে ছিলেন এমপি মহিববুর। এখানেও সংসদ সদস্যের স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২০৯৩.৫২ শতাংশ।

হলফনামায় মহিববুর স্ত্রী কোটিপতি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহিববুর রহমানের দেওয়া হলফনামায় তার স্ত্রীর নামে অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন ৩২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। তবে তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্ত্রীর নামে দুই কোটি ৯১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা রয়েছে বলে উল্লেখ ক‌রে‌ন। এর মধ্যে অস্থাবর সম্পদের বিবরণে বলা হয়, স্ত্রীর কাছে নগদ রয়েছে ৮০ লাখ ৮২ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ১৫ লাখ ৯৬ হাজার, সঞ্চয়পত্রে ১০ লাখ ও এমডিএস-এ তিন লাখ ৩২ হাজার টাকা। মৎস্য খামারে ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন।

আর স্থাবর সম্পদে উল্লেখ করা হয় কলাপাড়ায় ৬২ লাখ ৭৯ হাজার টাকার ৭.৫৬ একর কৃষিজমি, কলাপাড়ায় ১.০৮ একর ও মায়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত মিরপুরে ২.৫৭ কাটা অকৃষি জমি রয়েছে, যার দর সাত লাখ ২০ হাজার ২১৫ টাকা। ৫০ লাখ ৬৫ হাজার ৩৪০ টাকা ব্যয়ে আশাখালী নির্মাণাধীন মার্কেট, পল্লবী থানা মিরপুর মৌরশীতে ২২ লাখ ৬২ হাজার টাকার ১১৬০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট ও এওয়াজকৃত ২.৮০ একর ও বায়নাকৃত আট লাখ সাত হাজার ৮২৬ টাকার ১০ একর মৎস্য খামার রয়েছে তার। এ ছাড়া ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় স্ত্রীর নামে উপহারের ৫০ ভরি স্বর্ণ, ইলেকট্রনিকসসামগ্রী ও আসবাব দেখালেও দ্বাদশ নির্বাচনে এসব উল্লেখ করেননি।

রেখার শতকোটি টাকার জ‌মি

২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর তাপস সাহা গংদের পরিবারের কাছ থেকে কোটি টাকা দিয়ে আট একর জমি কেনেন রেখা। এই জমির অবস্থান ইটবাড়িয়া মৌজায়। দলিল নং-৪৫১২। ত‌বে আট একর জমির মালিকানা অস্বীকার করলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমানের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার। গত ১ অক্টোবর ঢাকার একটি নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এক হলফনামায় এ জমির মালিকানা তিনি অস্বীকার করেন। তবে কলাপাড়া সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে স্ত্রীর একক নামে ১৯টি দলিলের সন্ধান মিলেছে। সেখানে তার নিজের নামে ২৩ একর ২৪ শতাংশ জমি রয়েছে। আবার সাবেক এমপি দম্পতির যৌথ নামে আটটি দলিলের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেই দলিলগুলোতে দুজনের যৌথ মালিকানায় ১৩ একর ৪৪ শতাংশ জমি রয়েছে। স্ত্রী রেখার না‌মে কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দরের আশপাশে প্রায় ৩০ একর জ‌মির তথ‌্য পাওয়া গে‌ছে। এসব জমির বাজারমূল্য শত‌কোটি টাকা। এ ছাড়া সাবেক এমপির নামে কুয়াকাটার কাউয়ারচর মৌজায় আমমোক্তারনামার দুটি দলিলে ২ একর ৮৪ শতাংশ জমি রয়েছে। কুয়াকাটা পৌরসভা এলাকায় সাবেক এমপির নামে ঘোষণাপত্র দলিলে সবচেয়ে মূল্যবান ৮০ শতাংশ জমি রয়েছে। সব মিলিয়ে এই দম্পতির নামে ৪০ একর জমি থাকার প্রমাণপত্র কালের কণ্ঠের কাছে রক্ষিত আছে।

Sharing is caring!