প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ইসির ইভিএম প্রকল্প বাতিল

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ১৮, ২০২৪, ০২:৫৪ অপরাহ্ণ
ইসির ইভিএম প্রকল্প বাতিল

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

নির্বাচন কমিশনের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা, খরচ হয় ৩ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। বরাদ্দ থেকে অবশিষ্ট ছিল ১১৬ কোটি টাকা। আর সেই টাকায় প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়াতে গত জুনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে ইসি। কিন্তু সেই আবেদন গত বৃহস্পতিবার নাকচ করে দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)। এর মধ্য দিয়ে বাতিল হলো ইসির ইভিএম প্রকল্প।

তবে পরবর্তী কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইভিএম প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব মো. শফিউল আজিম। প্রকল্প বাতিল হওয়ায় ইভিএম প্রকল্পের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা মূল পদে ফিরে যাবেন। সরকারের বাতিল হওয়া এই প্রকল্পে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।

গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রধান ইফফাত তানজিয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ইসিকে প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত জানায় পিইসি। তাতে বলা হয়, গত জুনে শেষ হয়ে যাওয়া ইভিএম প্রকল্প ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নতুন করে এডিবিতে অন্তর্ভুক্ত করে মেয়াদ বাড়ানো সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘গত জুনের মাঝামাঝিতে আমরা নো কস্ট এক্সটেনশনের আওতায় এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে সরকারের কাছে আবেদন করেছিলাম। যেহেতু আবেদনে নতুন করে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়নি তাই আমরা আশায় ছিলাম। এবার মন্ত্রণালয় এক্সটেনশন যে তারা করেনি সেটা চিঠি দিয়ে আমাদের জানিয়েছে। ফলে কাগজপত্রে প্রজেক্ট শেষ। আশা করছি দ্রুত ফুল কমিশন পেয়ে যাব। এ বিষয়টি কমিশনের এখতিয়ার হওয়ায় নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর তারা কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন।’

 

এরই মধ্যে প্রকল্পের সব মালামাল বুঝে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘পরিচালকসহ ইভিএম প্রকল্পের জনবল ছিল ১৩ জন। গত জুনে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকল্পের দায়িত্ব থেকে বিদায় নিয়েছেন। তবে প্রকল্পের মালামালসহ সংশ্লিষ্ট সবকিছু বুঝে নেওয়ার স্বার্থে সেনাবাহিনীকে চিঠি দিয়ে প্রকল্পটির পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসানকে এখনো সংযুক্তি হিসেবে আমরা রেখে দিয়েছি। নতুন ইসি কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের সামনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। সেই কমিশন এ বিষয়ে নতুন করে চিন্তা করবে, না বিকল্প কিছু ভাববে, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। কমিশনের সিদ্ধান্তে ইসির পক্ষ থেকে ইভিএম প্রকল্প বুঝে নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, ‘নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর ইসির পক্ষ থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পের সময় এক বছর বাড়াতে আবেদন করা হলেও প্রকল্প বুঝিয়ে দিতে সব ডকুমেন্ট প্রস্তুত করা হচ্ছে। মাঠের (জেলা পর্যায়ে থাকা) ইভিএমগুলো ইসির বিভাগীয় কর্মকর্তারা বুঝে নিচ্ছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেডে (বিএমটিএফ) থাকা ইভিএমগুলো বুঝে নিতে কমিশনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে। ইভিএম কাস্টমাইজেশনের জন্য সেসব সেটআপ ও সরঞ্জাম কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এ ছাড়া টেকনোলজি ট্রান্সফার করার জন্য ইসির সিস্টেম ম্যানেজার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে তারা কাজ করেছেন। টেকনোলজিক্যাল ব্যাপারে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে তারা কাজ করছেন। নতুন কমিশনকে আশা করি চলতি নভেম্বরেই প্রকল্পের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারব।’

এ পর্যায়ে কতগুলো ইভিএম আছে জানতে চাইলে কর্নেল রাকিব বলেন, ‘ইসির সংগ্রহে থাকা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে গত জুন পর্যন্ত অকেজো ছিল ১ লাখ ৫ হাজার। আর বর্তমানে সচল রয়েছে ৪৫ হাজার ইভিএম। সব মিলিয়ে আমাদের পক্ষ থেকে সচল-অকেজো সব ধরনের ইভিএম ইসির কাছে হস্তান্তরের প্রস্তুতি রয়েছে।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ২০১৮ সালে প্রকল্পের অর্থছাড়ের আগেই তড়িঘড়ি করে উন্নত মানের ইভিএম কেনার সিদ্ধান্ত নেয় কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে ৮০ হাজার ইভিএম কেনে তারা। এরপর ধাপে ধাপে মোট ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে কেনা হয়। প্রতিটি মেশিনের পেছনে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকার মতো, যা পাশের দেশ ভারতে ব্যবহৃত ইভিএমের চেয়ে দাম কয়েক গুণ বেশি। ওই সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ইভিএমের বিরোধিতা করলেও পিছু হটেনি নূরুল হুদার কমিশন। এই প্রকল্পের জন্য সরকার বরাদ্দ দেয় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। সিদ্ধান্ত হয় ২ লাখ ২০ হাজার ইভিএম কেনার। তীব্র বিরোধিতার মুখে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর মাত্র ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হয়। সেই সময় কেনা ইভিএমগুলোর মেয়াদ ১০ বছর বলা হলেও অব্যবস্থাপনা আর অযত্নে তিন বছরের মাথাতেই অকেজো হতে শুরু করে। এত দামি মেশিন কোথায় রাখা হবে, তার জন্য প্রকল্পে কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। উপযোগী পরিবেশে ইভিএম মেশিন সংরক্ষণ না করায় একে একে ১ লাখ ৫ হাজার মেশিন অকেজো হয়ে যায়।

সদ্য বিদায় নেওয়া কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের পরিকল্পনা ছিল গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের। সেই লক্ষ্যে নতুন করে ৯ হাজার কোটি টাকার দ্বিতীয় ইভিএম প্রকল্পও হাতে নেয় তারা। কিন্তু সরকারের আর্থিক সংকটে আর সম্ভব না হওয়ায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সব আসনেই ভোট হয় ব্যালট পেপারে। এতে বিদ্যমান ইভিএমের প্রতি মনোযোগ হারায় নির্বাচন কমিশন। ইসির সংরক্ষণে থাকা বেশির ভাগ (১ লাখ ৫ হাজার) ইভিএম বর্তমানে অকেজো হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী। আর ছয় বছরের মাথায় প্রকল্পের কার্যক্রমই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রায় ৭০টি উপজেলায় ভোট গ্রহণে বাকি ৪৫ হাজার ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হয়।

এ পর্যায়ে সরকারি সিদ্ধান্তে ইভিএম প্রকল্প পুরোপুরি বাতিল করা হলেও ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোট গ্রহণে ইভিএম পদ্ধতি বা বিকল্প অন্য কোনো আধুনিক পদ্ধতি নতুন করে স্থান পাবে কি না, তা নির্ভর করবে নতুন নির্বাচন কমিশনের ওপর।

Sharing is caring!