ক্রীড়া ডেস্ক:
রেফারির শেষ বাঁশি। বাংলাদেশের ফুটবলাররা কিংস অ্যারেনায় মুখ লুকানোর চেষ্টা করছেন। অন্য দিকে স্বস্তির হাসি দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের। নভেম্বর ফিফা উইন্ডোতে দু’টি প্রীতি ম্যাচের সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ-মালদ্বীপ। প্রথম ম্যাচে সফরকারী মালদ্বীপ ১-০ গোলে স্বাগতিক বাংলাদেশকে হারিয়েছে।
প্রীতি ম্যাচে জয়-পরাজয়ের বাইরে দুই দলের জন্য ভিন্ন বার্তা। কিংস অ্যারেনায় গত বছর অক্টোবরে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম ধাপে মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারিয়ে পরের পর্ব নিশ্চিত করেছিল। এতে মালদ্বীপ বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাই থেকে ছিটকে যায়। এক বছর পর এই কিংস অ্যারেনায় বাংলাদেশকে হারিয়ে মালদ্বীপ সেই মধুর প্রতিশোধ নিলো।
গত বছর অক্টোবরে বাংলাদেশের বিপক্ষে হারের পর মালদ্বীপের ফুটবল অনেকটা নির্বাসনে চলে যায়। গত এক বছর মালদ্বীপ আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচই খেলেনি। শুধু আন্তর্জাতিক নয়, ঘরোয়া ফুটবলও হয়নি মালদ্বীপে। এক বছর না খেলা মালদ্বীপের ফুটবলারদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ নিজেদের মাঠে হারল।
ম্যাচের ১৮ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে আলী ফাসিরের গোলে মালদ্বীপ লিড নেয়। দিন শেষে সেটাই জয়সূচক গোলে পরিণত হয়। বাংলাদেশ ম্যাচ জুড়ে বেশ কয়েকটি আক্রমণ করেও ম্যাচে সমতা আনতে পারেনি। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড শেখ মোরসালিন দুর্দান্ত কয়েকটি শট নেন। মালদ্বীপের গোলরক্ষক হুসেইন শরীফ দারুণ সেভ করেন।
ম্যাচের ৬৫ মিনিটে বাংলাদেশের স্পেনিশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা তিনটি পরিবর্তন করেন। শাহরিয়ার ইমন, চন্দন রায় ও মজিবর রহমান জনি নামার পর খেলার গতি আরো বাড়ে। মজিবর রহমান জনি বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটও নিয়েছিলেন। সেই শট গোলরক্ষক প্রতিহতও করেন।
আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ দুভার্গ্যরেও শিকার। ৪৩ মিনিটে মিডফিল্ডার সোহেল রানার দূরপাল্লার শট সাইড পোস্টে লেগে ফেরত আসে। দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি সময়ে কর্ণার থেকে রাকিবের ব্যাক হিল গোল লাইন প্রবেশ করতে করতে বাইরে দিয়ে যায়। এ রকম বেশ কয়েকবার গোল বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ার্ধে মালদ্বীপও একাধিক সুযোগ পেয়েছিল। দুই-তিন দফা কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বক্সে একা থেকেও মালদ্বীপের ফরোয়ার্ড গোল করতে পারেননি। এক্ষেত্রে অবশ্য বাংলাদেশের ফুটবলাররা দারুণ দুই-তিনটি ক্লিয়ার করেন। বক্সের মধ্যে সেই ক্লিয়ারগুলো অনেকটা ফাউলের কাছাকাছি ছিল। ভুটানী রেফারি ভিরেন্দা রাই দারুণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। পেনাল্টির বাঁশি বাজাননি কোনো।
ম্যাচের শুরু থেকে নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশের। বেশ কয়েকটি গোলের আক্রমণ করেছিল স্বাগতিকরা। ১৮ মিনিটে বক্সের সামনে ফাউল করে প্রতিপক্ষকে ফ্রি কিক উপহার দেয় বাংলাদেশ। হামজা মোহাম্মদের নেয়া শটে বাংলাদেশ বক্সের মধ্যে ফ্রি হেড করেন আলী ফাসির। গোলরক্ষক মিতুল মারমা ছিলেন নীরব দর্শক।
ফ্রি কিকের সময় বক্সে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় মার্কিং খুবই কমন বিষয়। বাংলাদেশ সেই কাজটি ঠিক মতো করতে পারেনি। আলী ফাসির আনমার্কড অবস্থায় ছিলেন। একেবারে ধীরেসুস্থে হেড নেন।
বাংলাদেশ পরের মিনিটেই গোলের সুযোগ পেয়েছিল। মালদ্বীপ ডিফেন্ডার গোললাইন ক্লিয়ার করায় বাংলাদেশ সমতা আনতে পারেনি। বাংলাদেশ প্রথমার্ধে সমতা আনার জন্য মরিয়া ছিল। রাকিব বক্সের মধ্যে সুন্দর পজিশনে বল পেয়ে শট নিয়েছিলেন। শুয়ে পড়ে সেই শট প্রতিহত করে দলকে বাঁচান মালদ্বীপ ডিফেন্ডার ইরুফান। এর কিছুক্ষণ আগে ফাহিমের জোরালো শট পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।
বল পজিশন ও আক্রমণে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও সফরকারী মালদ্বীপ রক্ষণভাগ ভেঙেছে বেশি। বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা মাঝে মধ্যে বল হারিয়েছে আবার কখনো প্রতিপক্ষের পায়ে বল তুলেও দিয়েছে। গোলরক্ষক মিতুল মারমা আজ পোস্টের নিচে বেশ নড়বড়ে ছিলেন। সহজ কয়েকটি বল তিনি গ্রিপ করতে পারেননি।
প্রথমার্ধে আজ বাংলাদেশের ফুটবলারদের মধ্যে খানিকটা নজর কেড়েছেন শুধু কাজেম শাহ। সাবেক ক্রিকেটার হালিম শাহ’র ছেলে কাজেম মধ্যমাঠে গতি, বল বিতরণ, শুটিং সব দিক থেকেই দক্ষতা দেখিয়েছেন। আজই তিনি বাংলাদেশ দলের জার্সিতে প্রথম একাদশে খেলছেন।
Sharing is caring!