প্রজন্ম ডেস্ক:
কারাবিধির কোথাও কনডেম সেলের কথা নেই। তবুও যুগ যুগ ধরে চলে আসা ধারায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের যে সেলে রাখা হয়, সেটিকে উল্লেখ করা হয় কনডেম সেল হিসেবে। দেশের ৬৮টি কারাগারে ফাঁসির কনডেম সেলগুলোতে কবি শামসুর রাহমানের কবিতার (ফাঁসি) ওপরের বাক্যগুলোই যেন বুকে চেপে রেখে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর প্রহর গুনছেন আড়াই হাজার বন্দি। পলে পলে মৃত্যুর গন্ধমাখা তীব্র অনিশ্চিত এক করুণ আলেখ্য যেন। বন্দিদের এ সংখ্যাও বাংলাদেশের কারাগারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। কেউ কেউ প্রহর গুনছেন আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর থেকে আজ অবধি দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে। রায় ঘোষণার পরও তা কার্যকর না হওয়ার কারণ, উচ্চ আদালতে ঝুলে আছে তাদের ‘ডেথ রেফারেন্স’। এটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কারা কর্তৃপক্ষ কারও গলাতেই পরাতে পারে না ফাঁসির দড়ি। এটাই দেশের প্রচলিত আইন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা মনে করেন, প্রতিনিয়ত মৃত্যুর প্রহর গুনে অপেক্ষা করাটা সত্যিই বড় অমানবিক, বড় যন্ত্রণার। প্রতিটি মুহূর্ত যেন মৃত্যুর বিভীষিকায় আচ্ছন্ন। আবার ডেথ রেফারেন্সে গিয়ে অনেকে মুক্তিও পেয়ে যেতে পারেন। বাস্তবতা হচ্ছে, হাইকোর্টে বিচারক স্বল্পতার কারণে ডেথ রেফারেন্স বেঞ্চ কম। ফলে এখানেও জট বাড়ছে। ফাঁসির আসামিদের মামলা আসে ক্রম অনুযায়ী। তাই বিশেষ কিছু মামলা (অগ্রাধিকার ভিত্তিতে) ছাড়া এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কিছু করারও থাকে না। কার্যতালিকায় যখনই মামলা আসবে, তখন তা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। অবশ্য বিচারক বা বেঞ্চ বাড়ানোর জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে এবং সেটা কার্যকর হলে এই সংখ্যা কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
জেলখানার অভ্যন্তরে কনডেম সেল বলতে মূলত কারাবিধিতে কোনো সেল নেই। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথকভাবে যে সেলে রাখা হয়, সেটিই কনডেম সেল নামে পরিচিত। এক সেলে একজনই থাকে। কোনোটা ১০ বাই ৬ ফুট, কোনোটা ১২ বাই ৮। বাতাস চলাচলের জন্য আছে নামমাত্র ছোট্ট একটি জানালা বা ভেন্টিলেটর। আছে আনুমানিক আড়াই থেকে তিন ফুটের দেওয়ালঘেরা টয়লেট। কম্বল আর থালাবাসন ছাড়া অন্য কোনো আসবাব নেই এসব সেলে। কারাগারে এ রকমেই একেকটি সেলে রাখা হয় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের। বিচারিক আদালতের রায়ের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় অনেক আসামির বছরের পর বছর কেটে যায় নির্জন এই কক্ষে। শারীরিক ও মানসিক পীড়নে মৃত্যুদণ্ডের আগেই যেন মৃত্যুর এক করুণ আয়োজন। অথচ ডেথ রেফারেন্সে অনেক সময় এই বন্দি সম্পূর্ণ নির্দোষ হিসেবেও মুক্তি পেতে পারে। এ ধরনের উদাহরণও কম নেই।
কারা বিভাগের ডিআইজি জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, কনডেম সেল বা এই বিশেষ কক্ষে যারা থাকেন, তাদের সাধারণত একটু বেশি মানবিক দৃষ্টিতে দেখা হয়। স্বজনরা প্রতি মাসে চাইলে তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। সপ্তাহে এক দিন কারা সদস্যদের উপস্থিতিতে যেকোনো একজন স্বজনের সঙ্গে টেলিফোনে কথাও বলতে পারেন। প্রতিদিনই কিছু সময়ের জন্য তাদের সেলের বাইরে আনা হয়। কনডেম সেল নামে পরিচিত এই সেলগুলোর জন্য একটি আলাদা বাউন্ডারি রয়েছে, বন্দিরা এই দেওয়ালের বাইরে থাকা অন্য সেলগুলো বা অন্য বিভাগে যেতে পারেন না। এই বাউন্ডারির ভেতরেই তাদের জন্য রয়েছে গোসলের ব্যবস্থা। যখন দুই-তিন ঘণ্টার জন্য তাদের সেল থেকে বের করা হয়, তখন তারা এগুলো ব্যবহার করেন। এক সেলে একজন বন্দিই থাকেন। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সেলের ভেতরে কোনো সিলিং ফ্যান রাখা হয় না। সারিবদ্ধ লোহার রড দিয়ে বানানো দরজার বাইরে সিলিং ফ্যান রাখা আছে, যাতে গরমে তাদের কষ্ট না হয়। যথাসময়ে খাবার তাদের সেলে পৌঁছে দেওয়া হয়।
বর্তমানে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আড়াই হাজার বন্দির মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক আছেন কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে। গত ৫ আগস্ট এই কারাগারসহ বিভিন্ন কারাগার থেকে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ৮৯ জন পালিয়ে যান। তাদের মধ্যে ৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। আত্মসমর্পণ করেছেন একজন। বাকি ৮৩ জনের এখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তার এখানে প্রায় এক হাজার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি রয়েছেন। কারাবিধি অনুযায়ী এদের সঙ্গে যতটা সম্ভব সদয় ও মানবিক আচরণ করা হয়। এ ছাড়া কারাগারে প্রত্যেক বন্দির জন্য পিসি (প্রিজনার্স ক্যাশ) বলে একটি হিসাবের খাতা ও কার্ড আছে। এখানে তারা নিজেদের জন্য অর্থ (স্বজনদের দেওয়া) রাখতে পারে এবং এই অর্থ খরচ করে তারা চাইলে কারাগারের নিজস্ব ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে এনে খেতে পারে। আবার কোনো কোনো বন্দির পিসিতে ১০-১৫ লাখ টাকাও রয়েছে। সাধারণত অনেকে তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে মামলা পরিচালনার খরচের জন্য এই হিসাবে টাকা রাখে।
বিভিন্ন কারাগারে থাকা এই পিসির হিসাবনিকাশ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বন্দিদের মতে, কারাগারে যে খাবার দেওয়া হয় তা মানসম্মত নয়। অনেকে বাধ্য হয়ে খায়। আর যাদের সামর্থ্য আছে তারা পিসির মাধ্যমে মাঝেমধ্যে ক্যান্টিন থেকে আনিয়ে খায়। অনেকে নিয়মিতই পিসির খাবার খায়। কিন্তু পিসি খরচ করে খাবার খেলে সাধারণ দামের চেয়ে অনেক বেশি টাকা কেটে নেওয়া হয়।
আদালত সূত্র জানায়, মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে কাউকে কারাগারের নির্জন সেল বা কনডেম সেলে রাখা যাবে না বলে সম্প্রতি রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তাতে বলা হয়েছিল, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে অর্থাৎ আপিলসহ সর্বোচ্চ আদালতে অনুমোদনের আগে তাকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না। দুই বছরের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের ক্রমান্বয়ে কনডেম সেল থেকে সরিয়ে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে রাখার ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষকে। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে দিয়েছেন।
কারা অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী (অক্টোবর-২০২৪) দেশের ৬৮টি কারাগারের ফাঁসির সেলগুলোতে বন্দির সংখ্যা ২ হাজার ৫১৫। এদের মধ্যে ৮৬ জন নারী। এই সংখ্যাটাও দেশের কারা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এই আড়াই হাজারের বেশি আসামির মধ্যে হাইকোর্টে বিচার নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছেন ১ হাজার ১৯৫ জন। আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ১ হাজার ৩২০ জনের আপিল। প্রচলিত আইনে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ফাঁসি কার্যকরের আগে হাইকোর্টের অনুমতির প্রয়োজন। এর জন্য সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক মামলার সকল নথি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। এটাকে বলা হয় ডেথ রেফারেন্স। এর পাশাপাশি বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিলও করে থাকেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হতে পারে। ডেথ রেফারেন্সের সাজা বহাল থাকলে আসামির শেষ ভরসা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা (কেউ যদি প্রার্থনা করেন)। সেটাতেও ব্যর্থ হলে ফাঁসি কার্যকর করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাইদুল মুনিম পিয়াস বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, দায়রা জজ ও অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত কোনো আসামিকে আইন অনুসারে যেকোনো পরিমাণের জরিমানা, যেকোনো মেয়াদের কারাদণ্ড এবং মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে। তবে দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের আদেশ অবশ্যই হাইকোর্ট বিভাগ থেকে নিশ্চিত করতে হবে। এই ডেথ রেফারেন্স এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আসামি নিজে থেকে আপিল না করলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে এটি উচ্চ আদালতে নিরীক্ষা করা হয়ে থাকে। কোনো ত্রুটি থাকলে তা সংশোধনের উদ্যোগও নেওয়া হয়। ডেথ রেফারেন্স করা হয় ফৌজদারি কাযির্বধির ২৭ অধ্যায়ের ৩৭৪ থেকে ৩৭৯ ধারার অধীনে; আর আপিল করা হয় ৪১০ ধারার আওতায়। ৩৭৯ ধারায় বলা আছে, ডেথ রেফারেন্স নিষ্পত্তির পর হাইকোর্ট অনতিবিলম্বে পর্যবেক্ষণটি দায়রা আদালতে পাঠাবেন।
সাইদুল মুনিম পিয়াস আরও বলেন, দায়রা আদালতের পরিবর্তে কখনও কখনও হাইকোর্ট বিভাগেও কোনো বিশেষ ফৌজদারি মামলার বিচারিক কাজ সম্পন্ন হতে পারে। সেক্ষেত্রে হাইকোর্ট যদি মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন, তখন আর ডেথ রেফারেন্সের কোনো বিধান নেই।
মানবাধিকারকর্মী ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনে করেন, ডেথ রেফারেন্সের মতো স্পর্শকাতর বিষয় যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে বছরের পর বছর ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও তার পরিবার মানসিক, শারীরিক ও আর্থিকভাবে নিঃশেষ হয়ে যায়। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পুরো পরিবার ও সমাজে। বাংলাদেশ মৃত্যুদণ্ডপ্রবণ দেশগুলোর একটি হলেও সাজা কার্যকর হয় কম। বিচারিক আদালতের বেশিরভাগ ফাঁসির সাজা হাইকোর্টে শুনানির পর রহিত হয়ে যাবজ্জীবন, খালাস বা অন্য মেয়াদে পরিবর্তিত হয়।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী ইশতিয়াক েচৗধুরী বলেন, বিচারের অপেক্ষায় বছরের পর বছর জীবন আর মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা সমর্থনযোগ্য নয়। নির্জন সেলে মৃত্যুর দিন গোনা অমানবিক। নিষ্ঠুরতা নয়, এই প্রক্রিয়াকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে হবে। এর জন্য সরকার বা রাষ্ট্রপক্ষের আরও জোরালো ভূমিকা নেওয়া দরকার।
সুপ্রিমকোর্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে বারোশর মতো ডেথ রেফারেন্স, যা ২০১৯ সালে ছিল ৭৭৫টি। সাধারণত বছর ও মামলার ক্রমানুসারে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয়ে থাকে। তবে গুরুত্ব বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতেও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি হয়। এই শুনানির জন্য হাইকোর্টে কয়েকটি বেঞ্চ রয়েছে। ডেথ রেফারেন্সের নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা মামলাগুলোর মধ্যে পিলখানা হত্যা, পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎ হত্যা, শিশু রাজীব ও রাকিব হত্যা, নুসরাত জাহান রাফি হত্যা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, হোলি আর্টিজান মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান হত্যা, রমনা বটমূলে বোমা হামলা, সিরিয়াল কিলার রসু খাঁর মামলা, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা, বিশ্বজিৎ দাস হত্যা, দীপন হত্যা, সাগিরা মোর্শেদ হত্যার মতো উল্লেখযোগ্য মামলা রয়েছে। এসব চাঞ্চল্যকর মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি প্রয়োজন বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা আরও মনে করেন, এত বিপুলসংখ্যক চাঞ্চল্যকর মামলা আটকে থাকাটা উদ্বেগজনক। বিচারক ও বেঞ্চ বাড়িয়ে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির তাগিদ দিয়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত, ’৯০ দশকের শেষের দিকে পুরান ঢাকার জুড়িয়াটুলি লেনে খুন হন পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গাজি লিয়াকত ওরফে কালা লিয়াকত। এই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হন লালবাগের আজিমপুর নিউ পল্টন এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম বাবু ওরফে সুন্দর বাবু। মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিটও দেয় ডিবি পুলিশ। ২০০৩ সালের ২৬ জুন শাহ আলম বাবু আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ২০০৪ সালের ১৮ আগস্ট উচ্চ আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ডেথ রেফারেন্সে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল তার রায় কার্যকরের বিষয়টি। এই রায় নিয়ে লড়াই করেন মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট এলিনা খান। ২০০৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন শাহ আলম। কারণ এলিনা খানের আইনি লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত প্রমাণ মেলে গ্রেপ্তার শাহ আলম ওরফে সুন্দর বাবু আর প্রকৃত খুনি সুন্দর বাবু এক নন। খুনি সুন্দর বাবু অন্য আরেক মানুষ।
কারাগার থেকে যেদিন নিরপরাধ হিসেবে সুন্দর বাবু ছাড়া পান, সেদিন কাশিমপুর কারা ফটকে অ্যাডভোকেট এলিনা খানের সঙ্গে এই প্রতিবেদকও ছিলেন। মাঝেমধ্যেই কথা হয় তার সঙ্গে। শাহ আলম শোনান তার কনডেম সেলের দিনলিপি। কথায় কথায় তিনি বলেন, ‘রাত এলেই মনে হতো আমাকে মেরে ফেলা হবে। যেকোনো মুহূর্তে কনডেম সেল থেকে নিয়ে যাওয়া হবে ফাঁসির মঞ্চে। ভয়ে দুই চোখের পাতা এক করতে পারতাম না। এভাবে দুটি বছর অনেকটা নির্ঘুম কেটেছে। প্রায়-অন্ধকার একটা দুনিয়ার ভেতর ছিলাম। ওই জীবনকে মানুষের জীবন বলা চলে না।’
Sharing is caring!