স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) ও তদন্ত কমিটির প্রধানের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন বিয়ানীবাজারের মাথিউরা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল আলীম। তবে অধ্যক্ষের জমা দেয়া কাগজপত্রে বেশ গোঁজামিল রয়েছে বলে এডিসির দপ্তর সূত্র জানায়। মাওলানা আলীম তদন্ত কর্মকর্তার চাহিদা মোতাবেক তথ্যাদি উল্লেখপূর্বক কাগজাদি জমা দিলেও তা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি) মো: শামীম হোসাইন। তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন। তাই এই মূহুর্তে কিছু বলতে পারছিনা।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি মাথিউরা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উপস্থাপন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সংখ্যা, কানাডা প্রবাসী মাদ্রাসার সহকারি মৌলভী মুহিবুর রহমানের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে অনিয়ম, ছাত্রীদের ওয়াসরুম নির্মানে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক বিল পরিশোধে দূর্নীতির বিষয়টি সামনে চলে আসে।
সূত্র জানায়, মাথিউরা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় শতাধিক। সেখানে অধ্যক্ষ-এডিসিকে ৫শ’ শিক্ষার্থীর কথা বলেছেন। তখন এডিসি সকল শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আদায় করা বেতন-ফি’ রেজিষ্ট্রার দেখতে চান। মাদ্রাসা কর্তৃক পরিশোধিত একটি বৈদ্যুতিক বিলে ২২ হাজার টাকার স্থলে ৩২ হাজার টাকা পরিশোধের যৌক্তিক প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি। এছাড়াও প্রবাসী শিক্ষকের অনুকুলে বেতন-ভাতা প্রদানও বেআইনী। ছরওয়ার হোসেন আরোও জানান, সরকারিভাবে ছাত্রীদের জন্য ওয়াসরুম নির্মাণে ৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনুদানে ওই ওয়াসরুম নির্মাণ করেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ আলীম কোন সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি।
এদিকে অভিযোগকারী-এলাকাবাসীর দাবী, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল আলীমের তদন্তের দায়িত্বে থাকা এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি) মো: শামীম হোসাইন রহস্যজনক কারণে অতিরিক্ত সময় নিচ্ছেন। একটির পর একটি তথ্য চেয়ে তিনি তদন্তকাজে বিলম্ব করছেন। এলাকাবাসীর দাবীর মুখে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ আলীমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি কখনো তাকে বহিষ্কার আবার কখনো ছুটিতে পাঠানোর কথা বলছেন। এতে স্থানীয় জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিয়ানীবাজারের মাথিউরা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় এরকম অসংখ্য দূর্র্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ বছরের পর বছর থেকে স্থানীয় মানুষের মুখে-মুখে। কিন্তু অতি রাজনীতির কারণে কখনো এসব অভিযোগ আমলে নেননি তদারকি সংশ্লিষ্টরা। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দূর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাদ্রাসা বিভাগের সচিব, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সিলেটের জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে মাথিউরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, মাথিউরা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো: আব্দুল আলীম মাত্র ১০বছর বয়সে দাখিল পাশ করেছেন মর্মে নিয়োগকালীন সময়ে তার সনদ জমা দিয়েছেন। তার জমা দেয়া সনদ অনুযায়ী, ১৯৬৯ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করে ১৯৭৯ সালে দাখিল পাশ করেন। ২০১৯ সালের পরে মাদ্রাসার আয়-ব্যয়ের আর আনুষ্টানিক কোন নিরীক্ষা হয়নি। নিরীক্ষা কমিটির প্রতিবেদনে অনিয়ম ধরা পড়ার পর অধ্যক্ষ আব্দুল আলীমকে ৭ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দেয়ার আহবান জানানো হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ তা আমলেই নেননি।
এসব বিষয়ে অধ্যক্ষ মো: আব্দুল আলীম জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগ সত্য নয়। একটি মহল রাজনৈতিক কারণে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
Sharing is caring!