প্রজন্ম ডেস্ক:
মায়ানমার সরকারের গণহত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন নিয়ে হত্যাশা আরও বাড়ছে। দীর্ঘ সাত বছরেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। এর মধ্যেই গত কয়েক মাসে নতুন করে আরও ৪০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা এই হাতাশাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের সব উদ্যোগ এখন কার্যত থমকে আছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সম্প্রতি হতাশা ও উদ্বেগ জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ঢাকায় নিযুক্ত মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত ইউ কিয়াও সোয়ের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে হাতাশার কথা জানিয়ে তিনি নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ইস্যুটি তুলে ধরেন। তবে রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। ইউ কিয়াও সোয়ে এ বিষয়ে কোনো আশার বাণীও শোনাতে পারেননি।
রাষ্ট্রদূত উপদেষ্টাকে বলেন, রাখাইনে আরসা ও আরাকান আর্মিসহ অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীর যুদ্ধ চলছে কয়েক মাস ধরে। এখনো সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। কবে স্বাভাবিক হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। পরিস্থিতি পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। এ কারণে প্রত্যাবাসন ও নতুন করে রোহিঙ্গা আসার ব্যাপারে কোনো কিছুই করার নেই এই মুহূর্তে।
সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে চীনের মধ্যস্থতার ভূমিকাও এখন কার্যত নিষ্ক্রিয় রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চীন সরকারের মধ্যস্থতার প্রতিশ্রুতি থাকলেও এই মুহূর্তে সেই উদ্যোগও নেই। চীন বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা করছে না। বিষয়টি নিয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার কথা চলছে ঠিকই, তবে প্রতিক্রিয়া আসছে একেবারে দায়সারা গোছের। রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীর সংঘাত চলায় তাদেরও কিছু করার নেই বলে জানানো হয়েছে চীন সরকারের পক্ষ থেকে। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে চীন সরকার সব সময় আছে এবং থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে মায়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কক্সবাজারে যেসব অস্থায়ী ক্যাম্প নির্মিত হয়েছে সেখানে ইতোমধ্যে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। ক্যাম্পগুলোতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। মাদকের বিস্তার ঘটেছে। রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের এই অনিশ্চয়তার মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে একটি সেফ জোন প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। এতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ এই সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিবের নেতৃত্বে সব স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান করতে এবং রোহিঙ্গাদের তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তরের আহ্বানও জানান তিনি। রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা বাড়ানো এবং তাদের ওপর সংঘটিত গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
Sharing is caring!