প্রজন্ম ডেস্ক:
নানা অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি এবার অভিযোগ উঠেছে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ডিঙিয়ে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র ও বিতর্কিত এক কর্মকর্তাকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জিএম পদে পদায়নের। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন একই পদে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্য, দক্ষ হিসেবে দাবিদার কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ, পশ্চিমাঞ্চলে জিএম পদে সদ্য নিয়োগ পাওয়া রেল ভবনের যুগ্ম মহাপরিচালক (প্রকৌশল) মামুনুল ইসলাম তার শশুর আমজাদ হোসেন সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) পদে থাকার সময় থেকেই রেলের নিয়োগ, বদলি, পদায়নের মতো নানা কর্মকাণ্ডে সমালোচিত ও বিতর্কিত। এমন কর্মকর্তাকে পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএম (চলতি দায়িত্ব) পদের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে পদায়ন কেবল বিতর্ককেই উসকে দেবে।
তারা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনের সর্বস্তরে বৈষম্য নিরসন করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। অনিয়ম-দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্তরে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। বিগত সময়ে প্রশাসনে সংগঠিত অনিয়ম-দুর্নীতি নিরসনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পদক্ষেপ নিলেও তার প্রভাব পড়েনি রেলওয়ের প্রশাসনে। এমন অভিযোগ একাধিক কর্মকর্তার।
অভিযোগ উঠেছে, রেলওয়ের দ্বিতীয় গ্রেডের এই পদের জন্য যোগ্য, দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তা হিসেবে গ্রহণযোগ্য এমন ছয় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে বিতর্কিত এক কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়েছে। এই কর্মকর্তাকে পদায়নের নেপথ্যে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক লেনদেন ও ভবিষ্যতে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অঙ্গীকার। এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা বলেন, সলিমুল্লাহ বাহার (১৮ ব্যাচ), আহমেদ মাহবুব (১৮ ব্যাচ), ফরিদ আহমেদ (১৮ ব্যাচ), মইনুল ইসলাম (১৮ ব্যাচ), মাসুদ আল ফাত্তাহ (২০ ব্যাচ) ও শুবক্তগীন (২০ ব্যাচ)- এই ছয় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে মো. মামুনুল ইসলামকে (২০ ব্যাচের) পদায়ন করা হয়েছে। ওই ছয় কর্মকর্তা সবাই তৃতীয় গ্রেডের।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, প্রচলিত বিধিবিধান অনুসরণ করেই জিএম (ওয়েস্ট) পদে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশসন) পদটি খালি রয়েছে। রেলওয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই পদটি রেলওয়ের সার্বিক আয়ের প্রধান উৎস। কারণ সারা দেশে রেল পরিচালনা, যাত্রী, পণ্য ও মালামাল পরিবহনসহ রেলওয়ের আয়ের বৃহৎ অংশ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি দেখভাল করেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন)।
জানা গেছে, অতিরিক্ত মহাপরিচালক পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল সরদার সাহাদাত আলী রেলওয়ের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) পদে যোগদান করেন। মূলত এর পর থেকেই রেলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় গ্রেডের এই পদটি খালি রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) পদটি শূন্য হওয়ার পর এই পদে রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগের ২০ ব্যাচের কর্মকর্তা (৩য় গ্রেড) বর্তমান জিএম (ইস্ট) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়ার কথা। কিন্তু এখানেও জিএম (ইস্ট) ঊর্ধ্বতনদের ম্যানেজ করে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
এ বিষয়ে মহাপরিচালক সাহাদাত আলী বলেন, শিগগিরই অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) পদে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, জিএম (ওয়েস্ট) পদ আর জিএম (ইস্ট) পদ সমান হলেও এই পদ দুটির কার্যক্রম পরিচালনায় রয়েছে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। জিএম (ওয়েস্ট) শুধু জোনাল হেডকোয়ার্টার। আর জিএম (ইস্ট) জোনাল হেডকোয়ার্টারের পাশাপাশি ডিভিশনাল হেডকোয়ার্টার। রাজশাহীতে (ওয়েস্ট জোন) যা নেই, এমন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা চট্টগ্রামে (রেলওয়ে ইস্ট জোন) রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে একটি বড় ওয়ার্কশপ, একটি ট্রেনিং একাডেমি, লোকোশেডসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে। এসব জিএমকে (ইস্ট) ম্যানেজ করতে হয়। ইস্টার্ন জোন বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এবং এখানে জটিলতা বেশি থাকায় এবং দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে বর্তমান জিএমকে (ইস্ট) উঠিয়ে আনা যাচ্ছে না। তা ছাড়া জিএম (ইস্ট) অনেক দিন এই পদে নিযুক্ত থাকায় এই জোনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে তার ধারণা আছে এবং সবকিছুই সুষ্ঠুভাবে ম্যানেজ করতে পারছেন। তবে কিছুদিনের মধ্যেই তাকে উঠিয়ে এনে অন্য কোনো কর্মকর্তাকে জিএম (ইস্ট) পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
Sharing is caring!