প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

মোদির চোখে চোখ রেখে কথা, যেভাবে অনন্য উচ্চতায় ড. ইউনূস

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ৬, ২০২৫, ১২:৪৪ অপরাহ্ণ
মোদির চোখে চোখ রেখে কথা, যেভাবে অনন্য উচ্চতায় ড. ইউনূস

Manual1 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করে বিশ্বজুড়ে মানুষের ভালোবাসা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। বাংলাদেশের মুখ উজ্জল করেছিলেন বিশ্বের বুকে। ২৪’এর অভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্র-জনতার অনুরোধে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিধ্বস্ত করে ফেলে যাওয়া রাষ্ট্রের হাল ধরতে এগিয়ে আসেন তিনি। আগ্রাসী ভারতের লাগামহীন ষড়যন্ত্রের মুখে পাহাড় সমান চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে শপথ নেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে।

 

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়েই একের পর এক চমক দেখিয়ে যাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জুলাই অভ্যুত্থানের মতো এত বড় একটি ঘটনার পর সারাদেশে যেখানে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা থাকার কথা, সেখানে সরকার দারুণভাবে সব পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে।আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মান ও মর্যাদার সাথে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করে চলেছেন তিনি। দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ড. ইউনূস একটার পর একটা সফলতা অর্জন করে চলেছেন।

 

ভারত ও গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের একের পর এক ষড়যন্ত্র ও কূটচালকে উড়িয়ে দিয়ে কূটনীতিতেও দারুণ চমক দেখিয়ে এখন সারাদেশের মানুষের প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার প্রতি জনগণের আস্থাটা যে দিনকে দিন বাড়ছে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এর প্রমাণও মিলছে। লাখো মানুষ ড. ইউনূসের দেশ পরিচালনার প্রশংসা করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেকে লিখছেন, এই সরকারকে আরও অন্তত পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখা দরকার।

 

বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে ইউনূস সরকার কৌশলী ভূমিকা রেখে চলেছে। সর্বশেষ গত ৪ এপ্রিল ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ড. ইউনূসের সাথে ৪০ মিনিট দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখলেও ড. ইউনূসের এক ধরনের কৌশলী কূটনৈতিক চাপের মুখে বৈঠকে বসেন মোদি। দিল্লিকে পাশ কাটিয়ে তিনি বেইজিং সফরে গিয়ে চমক দেখানোর পর তাতেই মোদি সরকারের মাথা খারাপ হওয়ার দশা।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. ইউনূস-মোদির বৈঠক নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন বাস্তবতা কারোর অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ভারতের হস্তক্ষেপে দেশের জনগণের ভোটাধিকারকে কবর দিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর বাংলাদেশকে শোষণ ও লুটপাট করে আওয়ামী লীগ। গণহত্যাকারী দলটির সাথে ভারতের সাথে সম্পর্ক ছিল কেবলই গোলামির। বিনিময়ে রক্তচোষা হাসিনার একটাই চাওয়া ছিল ক্ষমতার গ্যারান্টি। ফলে দিল্লি হাসিনাকে সবসময় সেবাদাসী হিসেবেই গণ্য করে এসেছে, আচার-ব্যবহার করেছে সেভাবেই। ফ্যাসিস্ট আমলে ঢাকা-দিল্লির মধ্যে যত দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে তাকে ভৃত্যের সাথে মনিবের সাক্ষাৎ মতোই দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে আধিপত্যবাদী ভারত। একবার ভারত সফরে গিয়ে গর্বের সাথে ভারতীয় দাসত্বের আত্মস্বীকৃতিও দিয়েছিলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা।

 

Manual5 Ad Code

৫ আগস্ট সাবেক স্বৈরাচার হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দিল্লির প্রভাবমুক্ত সত্যিকারের স্বাধীন বাংলাদেশের দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মাদ ইউনূস। যার রয়েছে ব্যক্তিযোগ্যতা, সুদক্ষ আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও গ্রহণযোগ্যতা। তিনি কারো কাছে মাথা বিক্রি করে ক্ষমতায় আসেন নাই। নেই কোনো ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া ও লোভলালসা। নতুন করে পাওয়ার কিছু নেই ড. ইউনূসের, সবই আছে তার। হারানোরও কিছু নেই। বড় বিষয় হলো- তার পাশে আছে দেশের আপামর জনগণ।

 

বাস্তবিক কারণেই শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পর আবারও এক শক্তিশালী বাংলাদেশের মুখোমুখী ভারত। তাই নতুন বাস্তবতায় ড. ইউনূসের সাথে বৈঠকে বসার আগে দশবার ভাবতে হয়েছে মোদিকে। এজন্য যথেষ্ঠ হোম ওয়ার্ক প্রয়োজন ছিল তাও অভিজ্ঞ মহলের জানার কথা। কারণ মোদির ভালোভাবেই জানা আছে, দীর্ঘকাল ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত করা, সীমান্তের নারকীয় হত্যাকাণ্ড, একতরফা সুবিধা গ্রহণ, অবৈধ হস্তক্ষেপ, হাসিনাকে দিয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখার মতো ইস্যুগুলোতে কঠিন চাপের মুখে পড়তে হবে তাকে। আর যে কারণেই বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে বৈঠক নিয়ে ধোয়াশা তৈরি করা হয় দিল্লির তরফ থেকে।

 

অবশেষে ড. ইউনূসের কূটনীতিতে ধরাশায়ী হয়ে সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় দুই সরকার প্রধানের মধ্যে। হাসিনার মতো কোনো সেবাদাসীর আচরণ নয়, একেবারে মোদির চোখে চোখ রেখে কথা বললেন প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশের গুরুতর উদ্বেগগুলো স্রেফ জানিয়ে দেওয়া হয় তাকে। দিল্লিকে ছাড় দিয়ে কোনো কথা নেই।

 

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছেন, ইউনূস- মোদি বৈঠকে হাসিনাকে ফেরানোর দাবিতেও মোদিকে নমনীয় দেখা গেছে। তার আচরণে মনে হয়েছে তিনি স্বৈরাচারি হাসিনাকে ফেরত পাঠাবেন। আগামীতে তার বিচার এদেশের মাটিতেই হবে। এটাকে বলা হচ্ছে বাংলাদেশের কূটনৈতিক বিজয়। যে বিজয়ের নায়ক ড. ইউনূস নিজেই।

 

তিনি আরও জানান, বৈঠকে দুদেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট যতগুলো ইস্যু ছিল, সবগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যতগুলো বিষয় ছিল, সবগুলো বিষয়ই প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। যেমন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়ে কথা হয়েছে। শেখ হাসিনা যে ওখানে (ভারতে) বসে ইনসিন্ডিয়ারি (হিংসাত্মক) কথা বলছেন, সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়েও কথা হয়েছে।তিস্তা পানি চুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

 

Manual4 Ad Code

বৈঠক প্রসঙ্গে নেটিজেনরা বলছেন, একজন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাঁড়িয়ে ড. ইউনূসকে সম্মান জানানো চমৎকার লেগেছে। মোদি হাসিনাকে এরকম সম্মান কোনোদিন করেননি। পুরনো দিনের যে সম্পর্কটা ছিল সেটা বন্ধুত্ব নয় সেটা ছিল গোলামীর। সেটা নবায়ন করতে বাংলাদেশ কখনোই দেবে না। সমতার এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব হলে বাংলাদেশ ওয়েলকাম করবেন ভারতকে।

 

Manual8 Ad Code

নতুন বাস্তবতায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দলবল নিয়ে আগে থেকেই অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। দ্বিতীয়ত; ড. ইউনূসকে বৈঠক কক্ষে ঢোকার সাথে সাথে সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেছেন। অনেকে এটাকে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বললেও সবার চোখেমুখের ভাবভঙ্গি স্পষ্ট করেছে যে, কতটা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেছে মোদি ও তার সফরসঙ্গীরা।

 

Manual4 Ad Code

বৈঠকে ড. ইউনূস এর হাতে কিছু পেপার দেখা যায়। ফলে স্পষ্টত বোঝা যায়, সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই ছাড়বেন তিনি। বাংলাদেশের জনগণের সব উদ্বেগ তার কাছে তুলে ধরবেন তিনি। বাস্তবে হয়েছেও তাই। ব্যক্তিযোগ্যতার অভাবে দোভাষীর সাহায্যে কথা বলতে ও শুনতে হয়েছে মোদিকে। আর তা প্রয়োজন পড়েনি ড. ইউনূসের।

 

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আরেকটা চুম্বুকীয় দিক ছিল- প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে একটি ছবি উপহার দিয়েছেন। ছবিটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৩ জানুয়ারি ২০১৫ সালে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ১০২তম ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে অধ্যাপক ইউনূসকে স্বর্ণপদক প্রদানের সময় দিয়েছিলেন। ড. ইউনূসের এদিনের পরিধেয় কাপড় ও ১০ বছর আগের কাপড়ও ছিল এক।

 

মোদিকে জুলাই অভ্যুত্থানের ছবির পরিবর্তে ড. ইউনূসকে দেওয়া স্বর্ণপদকের ছবি দেয়ার দারুণ ব্যাখ্যা করেছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, কূটনীতির কত রঙ! মোদির দেয়া সম্মানের ছবি মোদিকে উপহার দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হলো ইউনূস একজন পৃথিবীব্যাপী সুপারম্যান। ভারতীয় মিডিয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে ‘মোল্লা ইউনূস’ সম্বধন করে যেভাবে কটাক্ষ ও প্রোপাগাণ্ডা চালানো হয়েছে, তাতেও একটা চপেটাঘাত দেয়া হয়েছে। স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, ড. ইউনূসের অসাধারণ কৃতিত্বের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল তাদেরই প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে। তাই তিনি কোনো ছোটখাটো খেলোয়াড় নন, একজন আন্তর্জাতিক মানের বিজয়ী খেলোয়াড়।

 

নেটাগরিকরা বলছেন, এতদিন পর বাংলাদেশ একজন মেরুদণ্ডওয়ালা শাষক পেয়েছে। ড. ইউনূসকে আরও ৫ বছর চোখ বন্ধ করে ক্ষমতা দেওয়া যায়। তিনি ভাবছেন পানির হিস্যা কিভাবে কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেওয়া যায়।বঙ্গোপসাগরে দেশের সীমানা নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।গভীর সমুদ্রবন্দর কত দ্রুত চালু করা যায়।আর ভারতের দালাররা ভাবছে যত তাড়াতাড়ি ড. ইউনূসকে বিদায় করে ভারতীয় গোলামীর জিঞ্জির দ্রুত পায়ে পরে নেয়া যায়।সারাজীবন পৃথিবীতে সরকার পতনের আন্দোলন হইছে, কিন্তু এবার হয়তো এ জাতীর প্রথম সরকার রক্ষার আন্দোলনে নামতে হবে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code