প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৭ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

ছেলের বায়না মিটিয়ে স্বপ্ন ভাঙছে বিয়ানীবাজারের অভিভাবকদের

editor
প্রকাশিত মার্চ ১৫, ২০২৫, ১১:১২ পূর্বাহ্ণ
ছেলের বায়না মিটিয়ে স্বপ্ন ভাঙছে বিয়ানীবাজারের অভিভাবকদের

 

 

স্টাফ রিপোর্টার:

 

মোটর সাইকেলের বেপরোয়া গতি আর নিয়ন্ত্রণহীন দূর্ঘটনায় বিয়ানীবাজারে ঝরে যাচ্ছে একের পর এক তাজা প্রাণ। এতে ভাঙ্গছে অভিভাবক ও পরিবারের স্বপ্ন। প্রতিটি অভিভাবকের ইচ্ছা থাকে ছেলে বড় হয়ে ভালো কিছু করবে। কিন্তু না! ছেলে বড় হওয়ার সাথে-সাথে মোটর সাইকেল কিনে দেয়ার বায়না গভীর হতে থাকে। আর সন্তানের শখকে গুরুত্ব দিয়ে এখানকার অভিভাবকরা তাদেরকে কিনে দিচ্ছেন প্রাণঘাতি মোটর সাইকেল।

 

ফ্যাশন আর শখের মোটর সাইকেল পেয়ে পরিবারের আদুরে সন্তানটির জীবনে আরোও গতি পায়। জীবনের বাঁক শুরু হওয়ার আগেই রাস্তার আঁকা-বাঁকা পথে শুরু হয় ওই সন্তানের রেইস-রেইস খেলা। কার আগে কে যাবে, এমন অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগীতায় বিয়ানীবাজারে প্রায় প্রতিদিন ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। ঝরছে তাজা প্রাণ, ভেঙ্গে যাচ্ছে সন্তানকে ঘিরে মা-বাবার স্বপ্ন।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিয়ানীবাজারে গত এক দশকে মোটর সাইকেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৭০ গুণ। পৌরশহরসহ পুরো উপজেলায় অন্তত: ১৫ হাজার মোটর সাইকেল দাবিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের কোনটির কাগজপত্র আছে আবার কোনটি আবেদিত। বেশীরভাগের কাগজপত্র নেই, অসংখ্য মোটর সাইকেল অবৈধ-চোরাই। যানজটের ভোগান্তি থেকে রক্ষা কিংবা গন্তব্যে সহজে যেতে মোটর সাইকেল অন্যতম বাহন। এটি ছোট যান কিন্তু ঝূঁকি অনেক। উঠতি বয়সীদের কাছে এটি অত্যন্ত প্রিয় ও শখের বাহন। বিয়ানীবাজারে মোটর সাইকেলের ব্যবহার প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে। শখের এই বাহন অপরিপক্ষদের কাছে থাকায় স্থানীয়ভাবে এটি বিপদজনক হয়ে ওঠেছে।

 

গত বৃহস্পতিবার রাতে বিয়ানীবাজার পৌরশহরের দীঘিরপাড়ে এক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারায় উপজেলার চরিয়া গ্রামের ওমর চৌধুরী। মাত্র মাসখানেক আগে তার আপন মামা ভাগ্নাকে মোটর সাইকেল উপহার দিয়েছিলেন। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে ওমরের নিথর দেহ। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে চারপাশের পরিবেশ। তাদের দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না স্বজন ও প্রতিবেশীরাও। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন ওমরের আরেক বন্ধু।

গত ২০২৪ সালে মোটর সাইকেল দূর্ঘটনায় উপজেলার ৪ তরুণ নিহত হন। আহত হয়েছেন আরোও অন্তত: অর্ধশত। প্রতি বছর বাড়ছে অস্থায়ী পঙ্গুত্বের সংখ্যা । গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারীতে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৮ জন।

 

নিরাপদ সড়ক চাই বিয়ানীবাজারের উপদেষ্টা প্রভাষক আব্দুস সামাদ বলেন, অদক্ষ বা নতুন চালক, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে বাইক চালানো, হেলমেট ব্যবহার না করাসহ ট্রাফিক আইন অমান্য করায় এসব অপ্রত্যাশিত মোটর সাইকেল দূর্ঘটনা ঘটছে। চার চাকার বাহনের তুলনায় দুই চাকার এই যানে ঝুঁকি ৩০গুণ বেশি।

বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশরাফ উজ্জামান বলেন, অপেক্ষাকৃত তরুণদের মোটরসাইকেল দেওয়ার বিষয়ে পরিবারকে আরও সচেতন হতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সচেতনতা চালাচ্ছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি। তারপরও রোধ করা যাচ্ছে না।

 

Sharing is caring!