প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২০শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

মসজিদ-ই-নববীর সেকাল-একাল

admin
প্রকাশিত
মসজিদ-ই-নববীর সেকাল-একাল

বেলায়েত হুসাইন:

 

সৌদি আরবের মদিনা মুনাওয়ারায় অবস্থিত মসজিদ-ই-নববী বিশ্ব মুসলিম জাতির কাছে ধর্মীয় বিবেচনায় দ্বিতীয় পবিত্রতম স্থান। মসজিদটি মুহাম্মদ (সা.)-এর মাদানি জীবনে ইসলামের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হতো। প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো মসজিদটি নির্মাণের পর থেকে ধাপে ধাপে কয়েকবার সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে, মসজিদের রূপরেখা, গঠন ও আয়তনে নানা পরিবর্তন এসেছে। মহানবী (সা.) প্রতিষ্ঠার সময়ে তাঁর মসজিদের আয়তন এক হাজার ৫০ বর্গমিটার নির্ধারণ করেছিলেন। হিজরতের সাত বছর পর মহানবী (সা.)-এর নির্দেশে তা বাড়িয়ে এক হাজার ৪২৫ বর্গমিটার করা হয়।

 

ঐতিহাসিকরা বলেন, মসজিদের বর্তমান পরিধি প্রাচীন মদিনা নগরীর প্রায় সবটুকু অঞ্চল বেষ্টন করে নিয়েছে। ড. মুহাম্মদ ওয়াজেদ আখতার লিখেছেন, মসজিদ-ই-নববীর বহিরাংশ জান্নাতুল বাকিতে গিয়ে মিশেছে, অথচ জান্নাতুল বাকি একসময় প্রাচীন মদিনা নগরীর বাইরে ছিল। এ জন্য এ কথা বলতে সমস্যা নেই যে, বর্তমানে মসজিদ-ই-নববী (সা.) সম্পূর্ণ প্রাচীন মদিনায় বিস্তৃত হয়েছে।

 

তাঁর ইন্তেকালের পর ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) প্রথম মসজিদ-ই-নববীর সংস্কারকাজে হাত দেন। মুসল্লিদের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি মসজিদটির সম্প্রসারণ করেন। মসজিদের চারপাশের ভূমি কিনে আয়তন বৃদ্ধি করেন। তবে যেদিকে উম্মাহাতুল মুমিনিনদের ঘর ছিল সেদিকটা অপরিবর্তিত রাখা হয়। ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে (২৯ হিজরি) তৃতীয় খলিফা উসমান (রা.)ও মসজিদ-ই-নববী সংস্কারের প্রয়োজন অনুভব করেন। তিনি সর্বপ্রথম খোদাইকৃত পাথর ও প্লাস্টারের দেয়াল তৈরি করেন এবং খোদাইকৃত পাথর ও লোহার ব্যবহারে পিলার ও স্তম্ভ স্থাপন করেন। ছাদ নির্মাণ করেন কাঠ দিয়ে। ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে (৮৮ হিজরি) খলিফা ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিকের নির্দেশে মক্কার গভর্নর ওমর ইবনে আবদুল আজিজ মসজিদ-ই-নববীর সম্প্রসারণ করেন। তখন এর পরিধি ছয় হাজার ৪৪০ বর্গমিটার। তিনি মসজিদে চারটি মিনার ও একটি মিহরাব স্থাপন করেন। তা ছাড়া অভ্যন্তরীণ স্তম্ভগুলোয় মর্মর পাথর ও সোনার কারুকাজ করেন। তখন স্তম্ভের সংখ্যা ছিল ২৩২।

 

আব্বাসি খলিফা আল মাহদি ১৬১-১৬৫ হিজরিতে মসজিদ-ই-নববীর সম্প্রসারণ করলে তার আয়তন দাঁড়ায় আট হাজার ৮৯০ বর্গমিটারে। আল মাহদি ৬০টি জানালা ও ২৪টি দরজা সংযুক্ত করেন। উসমানীয় খলিফা সুলতান সোলায়মান মসজিদ-ই-নববীর গম্বুজ মেরামত করেন এবং তার ওপর সোনায় মোড়ানো চাঁদ স্থাপন করেন। কৃত্রিম চাঁদ স্থাপন মূলত শুরু হয় এর আগে মামলুক আমলে। ১২২৮ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ গম্বুজটি সবুজ রঙে আবৃত করেন, যা এখনো সবুজ রঙেই আচ্ছাদিত আছে। ১২৭৭ হিজরিতে ফাটল দেখা দিলে সুলতান আবদুল মজিদ পুনরায় মসজিদের সংস্কার করেন। তখন আয়তন বেড়ে ১০ হাজার ৩০৩ বর্গমিটার হয়। এ সময় তিনি পাঁচটি নতুন দরজা সংযুক্ত করেন এবং ১১ মিটার পর্যন্ত প্রাচীরের উচ্চতা বৃদ্ধি করেন। তা ছাড়া ১৭০টি গম্বুজ ও ৬০০ তেলপ্রদীপ স্থাপন করা হয়। আরব উপদ্বীপের সর্বপ্রথম স্থাপনা হিসেবে ১৯০৯ সালে (১৩২৭ হিজরি) মসজিদ-ই-নববীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

 

সৌদি যুগ আরম্ভ হলে বাদশাহ আবদুল আজিজ ১৯৫০ সালে মসজিদ-ই-নববীর পরিধি ১৬ হাজার ৩২৭ বর্গমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। এ সময় মসজিদের স্তম্ভ ছিল ৭০৬টি ও গম্বুজ ছিল ১৭০টি। ১৯৭৩ সালে বাদশাহ ফয়সাল মসজিদের পশ্চিম দিকে প্রায় সাড়ে ৩৫ হাজার বর্গমিটার জায়াগার বরাদ্দ দেন এবং সমগ্র এলাকায় বৈদ্যুতিক পাখা, সাউন্ড সিস্টেম ও বিশেষ ছাতা স্থাপন করেন। সর্বশেষ এবং সবচেয়ে বড় সম্প্রসারণের কাজটি করেন বাদশাহ আবদুল্লাহ। ২০১২ সালে তাঁর সংস্কারের পরে মসজিদ-ই-নববী একসঙ্গে প্রায় ২০ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুত হয়। তথ্যসূত্র : বিবিসি উর্দু

সংবাদটি শেয়ার করুন।