স্টাফ রিপোর্টার:
৫ আগস্ট, বেলা ১টার পর থেকে বিয়ানীবাজার পৌরশহরে জমায়েত বাড়তে থাকে। ২-৪জনের ছোট ছোট গ্রুপে শহরে আসতে থাকেন বিএনপি-জামায়াত ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুপুর ২টার পর থেকে শহরজুড়ে শুরু হয় আনন্দ মিছিল-উৎসব। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষও আসতে থাকেন। আর শহর ছেড়ে নিরাপদে যাওয়া শুরু করেন আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এদিন বিকাল ৪টার পর থেকে শহরজুড়ে কিছুটা উশৃংখল আচরণ শুরু করেন বহিরাগত ক্ষুব্দ জনতা। দক্ষিণ বাজার থেকে ভাংচুরও শুরু হয়। হামলা ও ভাংচুর করা হয় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। সেখান থেকে থানার সামনে অবৈধভাবে নির্মিত মার্কেটে ভাংচুর করতে যায় বিক্ষুব্দ লোকজন। কিন্তু মার্কেটের দখলদার জহিরুল হক রাজু তার পরিচিত কয়েকজনকে নিয়ে বিয়ানীবাজার থানার দিকে এগুতে থাকেন। মূলত: নিজের অবৈধ মার্কেট রক্ষায় থানার দিকে বিক্ষুব্দ জনতাকে ধাবিত করেন রাজু। এরপর বিয়ানীবাজার থানায় দফায়-দফায় হামলা চালানো হয়। একপর্যায়ে গান পাউডার দিয়ে আগুণ ধরিয়ে দেয়া থানার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। এতে পুলিশের ব্যবহৃত দু’টি গাড়ি, বেশ কয়েকটি মোটর সাইকেল পুঁড়ে যায়। এরপর পৃথক আরেকটি পক্ষ উপজেলা প্রশাসনে গিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। তারা চেয়ারম্যানের কার্যালয়, ইউএনও’র দপ্তর, সমাজসেবা অফিস, প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক কার্যালয়ে হামলা ও ভাংচুর করে।
তখন সুযোগ সন্ধানী আরেক পক্ষ নয়াগ্রামে অবস্থিত সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদের বাড়িতে হামলা চালাতে পরিকল্পনা নেয়। তবে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের সাহসী ভূমিকায় সেটা আর হয়নি। এর আগে সাবেক মেয়র আব্দুস শুকুর, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ছালেহ আহমদ বাবুল, যুগ্ম সম্পাদক হারুনুর রশীদ দীপু, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: এবাদ আহমদের ব্যক্তিগত কার্যালয় ও ব্যবসা প্রতিষ্টানে ব্যাপক ভাংচুর চালায় উশৃংখল জনতা। তারা মালামাল বাইরে নিয়ে এসে আগুণ ধরিয়ে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিজয়ের উৎসবে শরীক হয়ে কিছু ক্ষুব্দ জনতা আবার কিছু সুযোগসন্ধানী চক্র লুটপাট, ভাংচুরে অংশ নেয়। তবে এ সময় উপজেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট আহমদ রেজা, সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার হোসেন, জেলা বিএনপির শিশু বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিক আহমদ, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু নাসের পিন্টু, পৌর সভাপতি মিজানুর রহমান রুমেল, সিনিয়র সহ-সভাপতি কবির আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক তাজ উদ্দিন কুটি, উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা ফয়জুল ইসলাম, সাবেক নায়েবে আমীর আবুল খায়ের, নায়েবে আমীর মাওলানা মোস্তফা উদ্দিন, পৌর আমীর জমির হোসেন, চেয়ারম্যান দেলোওয়ার হোসেন, সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহেরসহ আরোও কয়েকজন ক্ষুব্দ জনতাকে নিবৃত করেন। তারা বিয়ানীবাজারের সম্প্রীতি বজায় রাখার পক্ষে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা প্রদর্শণ দেখান। এমন দৃশ্য বিয়ানীবাজারে গত দেড়যুগ থেকে অনুপস্থিত ছিল।
সন্ধ্যার দিকে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে ৩ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। নিহতদের মরদেহ থানা কম্পাউন্ডের আশাপাশে পাওয়া যায়। এ সময় আরোও অন্তত: ৮ জন গুলিবিদ্ধ হন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে এ ঘটনায় পুলিশ নিহত তরুণ তারেক আহমদের মা ইনারুন নেসাকে বাদী করে থানায় মামলা দায়ের করে। এ মামলায় আওয়ামীলীগ নেতাদের বিবাদী করা হলেও তারেক নিহত কিংবা ভাংচুর-লুটপাটে তাদের কোন সম্পৃক্ততা ছিলনা।
এ বিষয়ে উপজেলা জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমীর আবুল খায়ের বলেন, গত ১৬ বছর অনেক কষ্ট পেয়েছি। জেল-জুলুমের শেষ ছিল না। আমার পরিবার, নেতাকর্মী সবাই আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু যাদের কারণে আমার ওপর নির্যাতন হয়েছে আমি তো তাদের মতো হতে পারি না। রাজনীতি তো মানুষের জন্যই করি। আজীবন এভাবেই করবো।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার হোসেন বলেন, ‘তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেন’- এ নীতিতে আমি বিশ্বাসী। আজীবন এ বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।
সংবাদটি শেয়ার করুন।