প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৪ঠা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ কমেছে দেড় বছরে

admin
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪, ০৮:১০ অপরাহ্ণ
৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ কমেছে দেড় বছরে

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

দেশে ডলারসংকট শুরু হওয়ার পর গত দেড় বছরে ইউএস ডলার বন্ডে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ হারিয়েছে সরকার। আলোচ্য সময়ে অনিবাসী বাংলাদেশি ও প্রবাসী গ্রাহক ডলার বন্ডে তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ তুলে নিয়েছেন। এর বিপরীতে নতুন করে বিনিয়োগের হার কমে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাবে নিজ দেশে ডলারসংকট ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ধারাবাহিক পতন ডলার বন্ডে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। দুটি কারণে ইউএস ডলার বন্ডে গত দেড় বছরে বিনিয়োগ কমেছে। তার একটি হলো, বিশ্বব্যাপী মন্দা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি। ফলে গ্রাহক ব্যয়ের সঙ্গে আয় মেলাতে না পেরে বিনিয়োগ ভেঙে পরিবার-পরিজন চালাচ্ছেন। অন্যটি হলো, বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে ডলারসংকট অব্যাহত থাকা এবং এ থেকে উত্তরণে সহসা কোনো সবুজ সংকেত দৃশ্যমান না হওয়া। এতে গ্রাহক সরকারের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন এই ভয়ে যে বিনিয়োগকৃত ডলার তিনি আর বৈদেশিক মুদ্রায় ফেরত পাবেন না। ইতোমধ্যে ডলার বন্ডে বিনিয়োগকারীদের অনেককে তাদের পাওনা ডলারে না দিয়ে টাকায় পরিশোধ করায় অসন্তোষ প্রকাশের মতো ঘটনাও ঘটেছে।

জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০২২-এর জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে গ্রাহকরা ডলার বন্ডের বিনিয়োগ থেকে প্রায় ৫০ কোটি ডলার বা সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। এর মধ্যে জুলাই ২০২২ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত সময়ে গ্রাহকরা তুলে নিয়েছেন ৪ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩ সময়ে তুলে নিয়েছেন ১ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। দেড় বছরে মোট তুলে নেওয়া নিট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। ডলারে এর মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি।

অনিবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের আর্থিক নিরাপত্তা দেওয়ার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে সরকার ১৯৮৮ সালে প্রথম ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড প্রতিষ্ঠা করে। এরপর ২০০২ সালে এসে ইউএস ডলার বন্ডের সূচনা করে। মোট দুই ধরনের ডলার বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ পান অনিবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এর একটি ডলার প্রিমিয়াম বন্ড। অন্যটি ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বিগত জুলাই থেকে ডিসেম্বর (২০২৩) পর্যন্ত ছয় মাসে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার নিট বিনিয়োগ গ্রাহকরা তুলে নিয়েছেন। আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) গ্রাহকরা ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডের ৩ হাজার ৩২৫ কোটি টাকার নিট বিনিয়োগ তুলে নেন। গত দেড় বছরে নতুন বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ২৭৫ কোটি টাকার মতো।

এদিকে ডলারসংকটে দেশের আমদানি বাণিজ্য সীমিত হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিবিদরা এ ধরনের নিয়ন্ত্রিত আমদানি ব্যয়কে উচ্চ মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ হিসেবে শনাক্ত করেছেন। বৈদেশিক ঋণের প্রবাহে গতিশীলতা সৃষ্টির তাগিদও দেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার নিজেও মূল্যস্ফীতির নানাবিধ কারণের মধ্যে ডলারসংকটকেও দায়ী করেছেন। গভর্নর এও বলেন, ‘বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ানোই এর একমাত্র সমাধান। সরকারকে এ ব্যাপারে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি।’ উল্লেখ্য, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের পরামর্শ নিয়ে সরকারকে জানায়।

অবশেষে সরকার অনেকগুলো উদ্যোগের মধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি (২০২৪) ডলার বন্ডে বিনিয়োগের সুদহারও বাড়ায়। সরকার প্রত্যাশা করে, দেশের সংকটময় সময়ে অনিবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা ডলার বন্ডে বিনিয়োগ বাড়াবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ডলার বন্ডে সুদহার বাড়ানোর ফলে বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রভাব আসতে পারে। তবে সারা বিশ্বেই ডলার এখন শক্তিশালী। কর্মকর্তারা বলেন, জানুয়ারিতে সুদহার বাড়ানোর ফলাফল আসবে ফেব্রুয়ারির শেষে।

নতুন সুদহার অনুযায়ী ১ লাখ ডলার পর্যন্ত প্রিমিয়াম বন্ডের প্রথম বছর সুদহার হবে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। দ্বিতীয় বছরান্তে এ সুদহার একটু বেড়ে ৭ শতাংশ এবং তৃতীয় বছরে সুদ দেওয়া হবে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। একই বন্ডে ১ লাখ ডলারের বেশি ও ৫ লাখ ডলার সীমা পর্যন্ত সুদহার হবে প্রথম বছর ৫ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং তৃতীয় বছর ৬ শতাংশ। ৫ লাখ ডলারের ঊর্ধ্বে যেকোনো সীমা পর্যন্ত সুদহার হবে প্রথম বছর ৪ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর সাড়ে ৪ শতাংশ এবং তৃতীয় বছর ৫ শতাংশ।

এদিকে ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে ১ লাখ ডলারের সুদহার হবে প্রথম বছর সাড়ে ৫ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর ৬ শতাংশ এবং তৃতীয় বছর সাড়ে ৬ শতাংশ। ১ লাখ ১ ডলার থেকে ৫ লাখ ডলারের সুদহার হবে প্রথম বছর ৪ শতাংশ, দ্বিতীয় বছরে সাড়ে ৪ শতাংশ এবং তৃতীয় বছরে ৫ শতাংশ। ৫ লাখ ডলারের ঊর্ধ্বে যেকোনো সীমার বিনিয়োগে সুদহার হবে প্রথম বছর ৩ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর সাড়ে ৩ শতাংশ এবং তৃতীয় বছরে ৪ শতাংশ।

সার্কুলারে বলা হয়, স্কিম দুটির রিটার্ন ডলারের পাশাপাশি টাকায় নেওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে বিনিময় হারের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। আর পাঁচ বছর মেয়াদি ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে সুদহার আগের মতোই সাড়ে ১২ শতাংশ রাখা হয়েছে।

দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে এ সার্কুলার পাঠিয়ে সর্বশেষ সুদহারের বিষয়টি গ্রাহককে অবগতির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড

বিনিয়োগের পরিমাণ- ইউএস ডলার ৫০০; ইউএস ডলার ১ হাজার; ইউএস ডলার ৫ হাজার; ইউএস ডলার ১০ হাজার এবং ইউএস ডলার ৫০ হাজার। মেয়াদ: ৩ (তিন) বছর।

ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড

বিনিয়োগের পরিমাণ- ইউএস ডলার ৫০০; ইউএস ডলার ১ হাজার; ইউএস ডলার ৫ হাজার; ইউএস ডলার ১০ হাজার এবং ইউএস ডলার ৫০ হাজার। মেয়াদ: ৩ (তিন) বছর।

যেখানে পাওয়া যায়

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশে অবস্থিত যেকোনো তফসিলি ব্যাংকের অথরাইজড ডিলার (এডি) শাখা এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের তফসিলি ব্যাংকের শাখা, এক্সচেঞ্জ হাউস, এক্সচেঞ্জ কোম্পানি থেকে ক্রয় করা যায়। ২০২২ সালের আগস্টে এ দুটি বন্ডে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়া হয়েছে।

বিনিয়োগের অন্যান্য সুবিধা

এ দুটি বন্ডেই বিনিয়োগকৃত অর্থ ডলারে প্রাপ্য। প্রতি ষান্মাসিক ভিত্তিতে মুনাফা বিতরণ, বন্ডের বিপরীতে ঋণ গ্রহণের সুবিধা রয়েছে, নমিনি নিয়োগ/পরিবর্তন ও বাতিল করা যায়; বন্ড হারিয়ে গেলে, পুড়ে গেলে বা নষ্ট হলে ডুপ্লিকেট বন্ড ইস্যুর সুযোগ রয়েছে এবং এ বন্ডে বিনিয়োগকৃত অর্থ ও অর্জিত মুনাফা আয়কর মুক্ত। এ ছাড়া ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা রয়েছে। বিনিয়োগকৃত অর্থের জন্য মুনাফা বিনিয়োগকারীর ইচ্ছা অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় বা ডলারে প্রাপ্তিযোগ্য।