প্রজন্ম ডেস্ক:
টেকনাফের নাফ নদ। মিয়ানমার জান্তার সঙ্গে বিদ্রোহীদের যুদ্ধ গড়িয়েছে এ নদের ওপার পর্যন্ত। ওপারে বর্তমানে বিদ্রোহীদের যুদ্ধ চলছে মায়ানমারের সীমান্তবর্তী নাফফুরা, শীলখালী, মংডু সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ক্যাম্পে।
এদিকে কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের একটি খালে এক মায়ানমার নাগরিকের লাশ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি জান্তা বাহিনীর কোনো এক সদস্যের লাশ হতে পারে। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী খাল থেকে তার লাশ ভেসে আসতে দেখেন স্থানীয়রা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম হোসেন। তিনি জানান- স্থানীয় কৃষকরা লাশটি দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। লাশটি উদ্ধারের জন্য টিম পাঠানো হয়েছে। লাশটির পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। লাশের পরনে পোশাক ও হেলমেট থাকায় কোন বাহিনীর সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এখনি নিশ্চিত নয় এটি।
স্থানীয়রা বলছেন- লাশটির পরনে থাকা পোশাক ও হেলমেট দেখে ধারণা করা হচ্ছে, এটি জান্তা বাহিনীর কোনো সদস্য। বেশ কয়েক দিন আগেই তাকে হত্যা করা হতে পারে। লাশটি ফুলে গেছে।
অন্যদিকে মায়ানমারে যুদ্ধের সুযোগে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের মানব পাচারকারী চক্র। নাফ নদ হয়ে রোহিঙ্গাদের দেশে ঢুকাতে তৎপর হয়ে উঠেছে চক্রটি। গত কয়েক দিনে ১০৪ জন রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঠেকানো হয়েছে বলে জানায় কোস্টগার্ড।
এ ছাড়াও বডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা ঠেকিয়েছে আরও ৭৫ রোহিঙ্গাকে। মূলত টেকনাফ সীমান্তবর্তী কয়েকটি মানব পাচার চক্র রোহিঙ্গাদের দেশে ঢুকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। থেমে থেমে কয়েকটি পয়েন্টে গুলির শব্দ শোনা গেলেও সীমান্ত পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক। আতঙ্ক নিয়েই কাজে যোগ দিচ্ছেন অনেকে।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মাদক চোরাচালানের অন্যতম রুট এ নদ। তাই যুদ্ধকালীন এ সময়ে পুরো সীমান্তে কড়া অবস্থানে কোস্টগার্ড। টহল চলছে দিন রাত। এ পর্যন্ত ১০৪ জন রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঠেকিয়েছে কোস্টগার্ড।
সরেজমিনে দেখা যায়, লম্ববিল, উনছিপ্রাং, কানজড় পাড়া এলাকাসহ নাফ নদে ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে অবস্থান করছে কিছু রোহিঙ্গা। যেখানে ছোট শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষ আছে। তারা বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে বিজিবি বাঁশি দিলে মিয়ানমারের সীমান্তে চলে যায়। তারা মিয়ানমারের কুমিরখালী জুমহাড়া ও ঘোনাপাড়া এলাকার বাসিন্দা বলে জানা যায়।
খারাংখালীর বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকা দিয়ে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে। বেশ কিছুদিন ধরে ডিঙি নৌকা নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। তারা কয়েকবার প্রবেশের চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু বিজিবির বাধায় ঢুকতে পারেনি। তারা মিয়ানমারের শহর কুমিরখালীর বাসিন্দা। কুমিরখালী ঘাঁটি দখল নিতে কয়েক দিন ধরে ওই এলাকায় দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ ও বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এর কারণে তারা এদিকে পালিয়ে আসছে।
টেকনাফের লম্বাবিল এলাকার বাসিন্দা নাছির উদ্দিন বলেন, কাল আমাদের সীমান্ত দিয়ে কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। পরে বিজিবি আটক করে তাদের দেশে ফিরিয়ে দেয়। আমাদের লম্বাবিল এলাকার সীমান্ত দিয়ে খালি চোখে নাফ নদে রোহিঙ্গা বোঝাই ৩-৪টি ডিঙি নৌকা দেখা যায়।
কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার বলেন ‘টেকনাফের হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত নদীপথজুড়ে টহল জোরদার করেছে কোস্টগার্ড। এ পর্যন্ত ১০৪ রোহিঙ্গা নাগরিককে সে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কোনো বিদেশি নাগরিক যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সেদিকে আমরা সর্বোচ্চ নজর রেখেছি।’
টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন- হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল এলাকায় নাফ নদের শূন্যরেখা অতিক্রম করে মিয়ানমার থেকে আসা সন্দেহজনক দুই নারী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে। এ সময় বিজিবির সদস্যরা ওই দুই নারীকে দেখতে পেয়ে থামার নির্দেশ দেন। পরে তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুই নারী নিজেদের মায়ানমারের নাগরিক পরিচয় দেন। পরে তাদের পুশব্যাক করা হয়।
যুদ্ধ থামলেও মাঝে মাঝে গুলির শব্দ বা মর্টার শেল নিক্ষেপ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে
কক্সাবাজারের সঙ্গে মায়ানমারের স্থলভাগ সীমান্ত এখন পুরোটাই বিদ্রোহীদের দখলে। এসব জায়গায় যুদ্ধ থামলেও মাঝে মাঝে গুলির শব্দ বা মর্টার শেল নিক্ষেপ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। গতকাল বালুখালী সীমান্তে খাল থেকে উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাতনামা এক লাশ। স্থানীয়রা ধারণা করছেন এটি মায়ানমারের জান্তা বাহিনীর কোনো এক সদস্যের লাশ হতে পারে।
উনছিপ্রাং ২২ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি রফিকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন মায়ানমারের আকিয়াবের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে কুমিরখালী ঘাঁটি দখল নিতে কয়েক দিন ধরে যুদ্ধে চলছে। কুমিরখালী জুমহাড়া ও ঘোনা পাড়া এলাকায় কয়েক শ রোহিঙ্গা পরিবার আছে। এলাকাগুলোতে ব্যাপক হামলা হচ্ছে। অনেকেই ঝুঁকিতে আছেন। সড়ক ও ইন্টারনেট সংযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। খাবার ও বিভিন্ন সংকট তৈরি হয়েছে।