প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৩রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

বিয়ানীবাজারের মাথিউরা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৬:১৮ অপরাহ্ণ

 

স্টাফ রিপোর্টার:

 

বিয়ানীবাজারের মাথিউরা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। আর এসব অনিয়মে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল আলীম নিজেই জড়িত বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। কেবল মৌখিক নয়, মাদ্রাসার ফ্রি-স্টাইল অনিয়ম নিয়ে দূর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাদ্রাসা বিভাগের সচিব, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সিলেটের জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে মাথিউরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, অধ্যক্ষের অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

জানা যায়, মাথিউরা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল আলীম বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে কখনো রাজি নয়। নিজের মনগড়া ম্যানেজিং কমিটি আর স্থানীয় রাজনীতিকদের ম্যানেজ করে ইচ্ছেমত আয়-ব্যয়ের মেমো জমা করতেন তিনি। ২০১৯ সালের পরে মাদ্রাসার আয়-ব্যয়ের আর আনুষ্টানিক কোন নিরীক্ষা হয়নি। তৎকালীন সময়ে নিরীক্ষা কমিটির সদস্য হাজী আসাদ উদ্দিন, হাজি নুর উদ্দিন, মাস্টার এফাজ উদ্দিন, মো: তকি উদ্দিন ও বেলাল হোসাইন স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাদ্রাসা প্রতিষ্টার পর ২০১২ সালে প্রথমবারের মত আভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। এরপর একসাথে ৭৫ মাসের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা করে ওই কমিটি। কমিটির নিরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ে। মাদ্রাসার আয়ের জমা বইয়ে কাটাকাটি, টাকার অংক মুছতে সাদা কালি ব্যবহার, আয়-ব্যয়ে অস্বচ্ছ পদ্ধতি, ছাত্র বেতন ও ফি’ উত্তোলনে অগ্রহণযোগ্য পন্থা অবলম্বন করেন অধ্যক্ষ। নিরীক্ষা কমিটির এমন প্রতিবেদনে অনিয়ম ধরা পড়ার পর অধ্যক্ষ আব্দুল আলীমকে ৭ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দেয়ার আহবান জানানো হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ তা আমলেই নেননি।

ওই নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছাত্র ভর্তি বাবদ রশিদ ছাড়া অগ্রহণযোগ্য কাগজে লিখে ফি’ আদায়, বার্ষিক পরীক্ষার খাতা দেখা বাবদ বিল পরিশোধের প্রমাণ ঘাটতি, উত্তরপত্র ছাপানোর রশিদপত্রে সভাপতির স্বাক্ষর না থাকা, পরীক্ষা ফি, বাবদ টাকা উত্তোলনে অস্পষ্টতা ধরা পড়ে। ২০১৩ সালে অধ্যক্ষ কর্তৃক ব্যয়িত ঋণের ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৭৫০ টাকার গ্রহণযোগ্য কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। অথচ ওই টাকা মাদ্রাসার হিসাব থেকে অধ্যক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত ঋণ বাবদ পরিশোধ দেখানো হয়েছে। এছাড়াও মাদ্রাসা পরিচালনায় আরো সাত কিস্তিতে অধ্যক্ষের দেয়া ঋণ ৮৭ হাজার ৫ শ’ টাকা থেকে অতিরিক্ত ৪৪ হাজার ২৫৫ টাকা বেশী নিয়েছেন আব্দুল আলীম। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর ব্যয়িত রশিদে ৩ হাজার টাকাকে ৫ হাজার টাকা লিখে রাখা হয়। একই বছরের ৩১শে অক্টোবর মাদ্রাসার অফিস সহকারি হাবিবের ঋণ বাবদ ৮ হাজার টাকা লিখে পরে তা অধ্যক্ষের ঋণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৩ ও ২০১৫ সালে নিয়োগ পরীক্ষা বাবদ ৫১ হাজার ৯২৫ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও এই খাতের পে-অর্ডার থেকে আয়ের বিষয়টি হিসাবে উত্তাপন করা হয়নি। ৫৫/১৩ নাম্বার রশিদে জমিয়াতুল মোদাররেছিনের সভায় ঢাকায় যাতায়াত, দাওয়াত নামা তৈরী এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ১৭ হাজার ৯১২ টাকা লিখা হলেও এর কোন ব্যয় ভাউচার ছিলনা। ২০১৪ সালে ঢাকায় যাতায়াতে ৬ হাজার ৯৭২ টাকা মাদ্রাসার হিসাব থেকে খরচ দেখানো হলেও কোন ভাউচার নেই। একই বছরের ফেব্রুয়ারীতে রশিদ ছাড়া ৫ হাজার ৪০২ টাকা উত্তোলন করা হয়। একই বছরে সৌদি রাষ্ট্রদূতের সংবর্ধনা বাবদ ঢাকায় যাতায়াতে ব্যয় ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৯৪০ টাকা। রাষ্ট্রীয় অনুষ্টান না হওয়ার পরও একজন রাষ্ট্রদূতের সংবর্ধণা অনুষ্টানে গিয়ে মাদ্রাসার হিসাব থেকে টাকা খরচ করার যৌক্তিকতা নিয়ে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে প্রশ্ন উত্তাপন করা হয়। এছাড়াও ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষরে ফি’ থেকে আদায় করা টাকার স্বচ্ছ হিসাব পাওয়া যায়নি। ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারী স্থায়ী চাঁদা আদায়ের বইয়ের হিসাবেও গরমিল পাওয়া গেছে। ফেব্রুয়ারী মাসকে ৩১ দিনে হিসাব করে রশিদ ছাড়া ৭ হাজার ৭শ’ টাকা ভাউচার ছাড়া ব্যয় দেখানো হয়। ওই নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং তার সহায়তায় প্রায় অর্ধ কোটি টাকার অনিয়ম ধরা পড়ে।

সূত্র জানায়, মাথিউরা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় দাখিল পরীক্ষার কেন্দ্র ঘোষণায় অধ্যক্ষ আব্দুল আলীম প্রতিবেশী অনেক মাদ্রাসার অধ্যক্ষের সই-সিল জাল করে সুপারিশপত্র তৈরী করেন। কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পাওয়া ওই অধ্যক্ষ দাখিল পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জনপ্রতি উল্লেখযোগ্য হারে চাঁদা উঠালেও পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত শিক্ষকদের তুলনামুলক কম সম্মানী প্রদান করেন। কেবল পরীক্ষা কেন্দ্রর ফি’ থেকে প্রতি বছর প্রায় লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করছেন তিনি। পরীক্ষায় চলে নকলের প্রতিযোগতা। শিক্ষকরা তাতে বাঁধা দিলে অধ্যক্ষ কর্তৃক হয়রানীর শিকার হতে হয় বলে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন একজন সিনিয়র শিক্ষক। মাদ্রাসা পরিচালনায় অধ্যক্ষ মো: আব্দুল আলীম গত প্রায় দেড় যুগ থেকে ব্যক্তিগত বিধি, অতি রাজনীতিকরণ, ফ্রি-স্টাইল দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে প্রতিষ্টানটিকে ক্রমশ: অন্ধকারে নিয়ে গেছেন। যা এলাকাবাসীসহ স্থানীয় শিক্ষানুরাগী সচেতনমহলে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

 

এসব বিষয়ে মাথিউরা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল আলীম বলেন, জানামতে কোন আর্থিক অনিয়ম হয়নি। যারা এসব ছড়াচ্ছে তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়েছে। রশিদ ও ভাউচারে কাটাকাটি নিয়ে প্রশ্ন করলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

সিলেট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাইদ মো: আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, অধ্যক্ষ আব্দুল আলীমের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়টি আমাদের অফিসও অবগত। দ্রুতই এসব বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন।

    No feed items found.