প্রজন্ম ডেস্ক:
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে জাতিসংঘে ভাষণে এবং বিভিন্ন বৈঠকে কোন প্রেক্ষাপটে ছাত্র-জনতার আন্দোলন হয়েছে তা গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরবেন। এ আন্দোলনে কারা অংশ নিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের কীভাবে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে তার বর্ণনা দেবেন। এ ছাড়া ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর আন্তর্জাতিক মহলকে ভূরাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে বাংলাদেশের নতুন যাত্রা পথে সঙ্গে থাকার আহ্বান জানাবেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে এসব জানা গেছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে ২৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক যাবেন বলে জানা যায়। সংক্ষিপ্ত সফর শেষে দেশে ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে ফিরে আসার কথা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই প্রথম বিদেশ সফর।
সাধারণ পরিষদে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, উন্নয়ন সহযোগী, ফাউন্ডেশন ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। ব্যক্তিগতভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে এমন অনেক রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে ড. ইউনূসের অনির্ধারিত সংক্ষিপ্ত বৈঠক হওয়ার কথা আছে। সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহবাজ শরিফ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক শফ, বাহরাইনের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী সালমান বিন হামাদ বিন ইসা আল খলিফা, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গার সঙ্গে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডিসহ জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সংস্থার প্রধানরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানা গেছে। প্রধান উপদেষ্টা সামাজিক ব্যবসা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র ব্যবসায়ী পরিষদের সভায় যোগ দেবেন।
এসব বৈঠকে দেশের রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণের বাধাগুলো দূর করতে এবং নতুন বিনিয়োগ বাড়াতে আলোচনা করবেন। অন্যান্য আলোচনার পাশাপাশি এসব বৈঠকেও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয়গুলো জানাবেন।
খসড়া সূচি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসের যোগ দেওয়ার কথা আছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জো বাইডেনের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক না হলেও অনুষ্ঠানে দেখা হলে বাংলাদেশের বিষয়ে কথা সেরে ফেলবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এবারে জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য প্রাপ্তির ৫০ বছর উপলক্ষে আগামী মঙ্গলবার নিউইয়র্কে একটি সংবর্ধনার আয়োজন করছে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন। এ অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস যোগ দেবেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বহুবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায়ও ভাষণ দিয়েছেন। তবে এবার তিনি জাতিসংঘে যাচ্ছেন নতুন পরিচয়ে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে। এই পরিচয়ে তিনি বিশ্ব সংস্থাটির সাধারণ পরিষদে নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় অনুযায়ী ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে নির্ধারিত বক্তৃতা দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে বিভিন্ন বৈঠকে বাংলাদেশ সরকার কোন কোন খাতে কী ধরনের সংস্কার গ্রহণ করতে চলেছে তা জানাবেন। এসব সংস্কার কেন জরুরি এবং এ বিষয়ে এরই মধ্যে কী ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন তা নিয়েও কথা বলবেন। সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণের কারণ হিসেবে বিগত সরকারের আমলের বিভিন্ন দুর্নীতির বর্ণনা দেবেন। সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন সংস্কার এবং সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশন ১ অক্টোবর থেকে কাজ করবে বলে জানাবেন।
প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন বৈঠকে দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাবেন। গুম, আয়নাঘর ও গণহত্যা, লুটপাট, অর্থ আত্মসাতে জড়িতদের বিচার করা হবে বলেও জানাবেন। আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করার জন্য এসব বিচারকাজে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের উপস্থিত থাকার অনুরোধ করবেন। ফ্যাসিবাদী শাসনের ১৫ বছরে গুমের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করার জন্য পৃথক একটি কমিশন গঠনের কথাও বলবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের স্মৃতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের গ্রাফিতি আর্টবুক উপহার দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এবারে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি দল যাবে যুক্তরাষ্ট্র সফরে। এবার তার সফরসঙ্গীর সংখ্যা হবে সংক্ষিপ্ত। বিগত সরকারের আমলে সফরসঙ্গী হিসেবে শতাধিক সদস্য থেকেছেন। এবারে আগের ধারা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা থাকছে। এটা তো কোনো আনন্দ ভ্রমণ না। অফিশিয়াল কর্মসূচি। তাই প্রয়োজনীয় জনবল থাকবেন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে। এবারে সফরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ; সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানসহ প্রায় ২০ জনের প্রতিনিধিদল।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভারতের প্রধানমমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। তবে মোদির সঙ্গে বৈঠক হলে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের সময় উপস্থিত রাখা এবং সার্ক গতিশীল করার বিষয়গুলো থাকবে বলে জানা গেছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যারা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন, আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন তাদের সহযোগিতার জন্য গঠিত ‘জুলাই ফাইন্ডেশন’-এর জন্য তহবিল গঠনের বিষয়টিও ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে এমন সব রাষ্ট্রপ্রধান, সংস্থা ও ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আলোচনায় আনবেন। বৈঠকে জানানো হবে, গণ-অভ্যুত্থানে সব শহিদের পরিবারকে পুনর্বাসন করতে, আহত শিক্ষার্থী শ্রমিক-জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করতে এ ফাউন্ডেশন থেকে ব্যয় করা হবে।
সংবাদটি শেয়ার করুন।