প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৪ঠা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

পরিত্যক্ত শৈশব: আরণ্যক শামছ

admin
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪, ০৭:০১ অপরাহ্ণ
পরিত্যক্ত শৈশব: আরণ্যক শামছ

.
বহুযুগ ধরে একটি ভাঙ্গা জানালা ও কিছু ‘স্মৃতিময় ভাঙচুর’ বুকের মধ্যে খেলা করতে থাকে। বহুযুগ আগে ঘাসের সাথে, ফড়িঙের সাথে, ঘুঘু ডাকা দুপুরের সাথে, ডাঙ্গুলির সাথে, নারিকেল পাতার বাঁশির সাথে, জারুলগাছের পাতার সাথে, রাতভর ব্যাপক বৃষ্টির সাথে, আমার দেয়া প্রতিশ্রুতির মিথ্যাগুলো হঠাৎ করে মনে পড়ে যায়। তাই শুকনো শৈশবের একটুকরো স্নিগ্ধ গন্ধ কুঁড়োতে এসে আমি দাড়িয়ে থাকি বহুকাল ধরে ফেলে রাখা একরত্তি উঠোনের কোনে।

 

 

একদিন যেখানে এসে নোঙর করত নৌকার গলুই। দেখি, বনমর্মরে ভেসে আসা চৈত্রের পাতা, শুকনো বাতাস, শিমুল ফুল, গন্ধিগাছের আমের মৌ মৌ গন্ধ, ‘টুপা-টুপি’ খেলা, প্রিয়নাথ সারের প্রলয়-প্রহার, দয়াময় স্যারের মানসাংক, খেলার মাঠ, ডেফল গাছ, হান্নান চাচার বাকির খাতা, পাখি চাচার কন্ডডেন্সড মিল্কের চা, একেএকে সবাই শীতের নরম লেপমুড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে আসে মায়ের অসুস্থ প্রলাপ, বাবার কাঁধের ঋণের বোঝা, একেকটি ‘দুঃখ-নদী’, আমার বাল্য শিক্ষা, ধারাপাত আর নামতা শেখানো শিক্ষকের মুখ, তফৈ মৌলভী স্যার, মান্নান স্যারের সাদা পাঞ্জাবি, বিরাজ স্যারের-সুবোধ স্যারের অমূল্য ক্লাস, আলী আহমদ স্যারের মডার্ণ গ্রামার, আব্দুর রহমান স্যারের তুমুল পায়চারি, এসেম্বলির হুংকার আর আমার সব প্রিয় শিক্ষকদের মাতাল করা পাঠদান।

 

 

 

ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসে শৈশবের বন্ধুরা, যাদের চোখেমুখে লেগে আছে আজকাল এক অদ্ভুত জোনাকিবোধ ও মিথ্যার বার্ধক্য। আমি দেখি শৈশব থেকে প্রৌঢ়ত্বের দীর্ঘপথে পাড়ি দিতে গিয়ে একেএকে খসে পড়েছে সম্পর্কের সকল পলেস্তারা। ‘ইট-পাথর-বালি-সুড়কি’ থেকে সরে পড়েছে বন্ধনের সিমেন্ট। আর তখনই লোলা নদীর নিভৃত ভাষা ও তার মিহি বাতাস আমাকে জড়িয়ে ধরে। ফিসফিস করে জানিয়ে দেয়, কতটুকু মানুষ হলে মানুষ কেড়ে নেয় নদীর মমতা। কতটুকু লোভে মাটিতে মিশে যায় লোলা নদীর ঢেউ।

 

 

নদী আর নদী নেই। তবুও আমি হলুদ মাখা বিকেলে গায়ে মেখে নেই তার প্রণয়-বিচ্ছেদ। বসে থাকি, যেন এক ধ্যানমগ্ন বক। আর তার তীরের বালুর ক্ষতে হাতড়ে বেড়াই আমার পরিত্যক্ত শৈশব।

 

আমার পুরোনো পুঁথির শোলক। আমার জলের কাহন। আর আমার শৈশবের সেই বাঁশের সাঁকো-টি। সাঁকো টি দুলছে, সাঁকো টি দুলছে, সাঁকো টি দুলছে।

(ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪)