প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৩রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

টাকা ছাপাতে যত খরচ

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ২, ২০২৪, ০৪:২২ অপরাহ্ণ

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

কোনো একটি দেশের পুরো অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় মুদ্রার ওপর নির্ভর করে। আর এ মুদ্রা যে যন্ত্রে ছাপা হয় তার আয়ুষ্কাল (লাইফটাইম) সাধারণত হয়ে থাকে ১৫ বছর। অথচ বাংলাদেশের টাঁকশালে মুদ্রা ছাপা হচ্ছে যেই যন্ত্রে তার বয়স ৪০ বছরেরও বেশি। এত পুরনো যন্ত্র দিয়ে ছাপানোয় মুদ্রার মান একদিকে যেমন খারাপ হচ্ছে, অন্যদিকে কমছে স্থায়িত্ব। আবার পুরনো যন্ত্র বারবার মেরামতের পেছনে গচ্চা যাচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। এ ছাড়া স্থায়িত্ব কম হওয়ায় বারবার মুদ্রা ছাপায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। এক কথায় দেশে টাকা ছাপায় অন্যান্য দেশের চেয়ে খরচ বেশি হচ্ছে। এসব বিষয় উল্লেখ করে ২০২১ সালে দেশে টাকা ছাপার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেডের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির দুজন জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী। কিন্তু তাদের চিঠি পাওয়ার পরও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

যদিও অধিকাংশ দেশ এখন ছাপা মুদ্রার চেয়ে ক্যাশলেস সোসাইটিতে (মুদ্রাবিহীন ডিজিটাল বিনিময় ব্যবস্থা) যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও ছাপা মুদ্রার চেয়ে ক্যাশলেস লেনদেনকে উৎসাহিত করছে। গত বছর ক্যাশলেস সোসাইটি তৈরির উদ্যোগ নেয় সংস্থাটি। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কারণে লেনদেনের ক্ষেত্রে ছাপা মুদ্রার চেয়ে ক্যাশলেস লেনদেনের গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুণ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের টাঁকশালের মেশিনগুলো সুইজারল্যান্ড ও জার্মানির তৈরি। আশির দশকের প্রথমদিকে এসব মেশিন স্থাপন করা হয়। এখন আর এসব মেশিন তৈরি করা হয় না। অনেক পুরনো মেশিন হওয়ায় এর পার্টস (যন্ত্রাংশ) পাওয়া যায় না। ফলে কোনো যন্ত্রাংশ সংযোজনের প্রয়োজন হলে তা অর্ডার দিয়ে তৈরি করতে হয়। এমনকি একটি নাট দরকার হলেও তা বানাতে হয়। এ কারণে ১০০ টাকার পার্টস বানাতে গিয়ে হাজার টাকা খরচ হয়। আবার কোম্পানি একটি যন্ত্রাংশ তৈরি করে দেয় না, প্রয়োজন না থাকলেও একসঙ্গে অনেক যন্ত্রাংশ তৈরি করতে হয়। এসব যন্ত্রাংশ তৈরির পেছনে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। আর বেশিরভাগ যন্ত্রাংশ ব্যবহার ছাড়াই অকেজো হয়। টাঁকশালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), জেনারেল ম্যানেজার (প্রডাকশন) ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যোগসাজশ করে নতুন মেশিন স্থাপন না করে পুরনো মেশিন ওভারহোলিং করতে আগ্রহী বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, টাঁকশালের পুরনো মেশিন ওভারহোলিং করতে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। কাজ শুরুর পর এ ব্যয় আরও বাড়তে পারে। আর টাঁকশালের নতুন মেশিন স্থাপনে আড়াইশ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। শুধু লুটপাটের জন্য টাঁকশালের পুরনো মেশিন ওভারহোলিং করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টাঁকশালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘টাঁকশাল বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। এটি গভর্নরের নেতৃত্বাধীন একটি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বোর্ডই টাঁকশালের বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। বিগত সরকারের আমলে টাঁকশালের মেশিন ওভারহোলিংয়ের বিষয়ে কিছু কাজ করা হয়েছিল। সরকার পরিবর্তনের পর নতুন করে কিছুই হয়নি। এ বিষয়ে বোর্ড যে সিদ্ধান্ত নেবে, সে প্রক্রিয়ায় কাজ করা হবে।’

জানা গেছে, টাঁকশালে পুরনো ব্যাংক নোট প্রিন্টিং ও মেশিন ওভারহোলিংয়ের বিষয়টি তুলে ধরে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জামিল আখতার শাহাজাদা ও উপ-প্রধান প্রকৌশলী এনামুল হক জোয়ার্দার বিস্তারিত তুলে ধরে দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, তারা টাঁকশালের মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল শাখায় ১৯৮৩ ও ১৯৮৬ সালে যোগদান করেন। এরপর ২০১৮ ও ২০২১ সালে টাঁকশাল থেকে অবসরে যান। অবসরে যাওয়ার পরও জাতীয় স্বার্থে টাঁকশালের মেশিন সম্পর্কিত কিছু তথ্য চেয়ারম্যানের নজরে আনার জন্য এ চিঠি দেন।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ সালে নতুন চারটি ব্যাংক নোট মেশিন কেনার পর আশির দশকে স্থাপিত প্রায় ৪০ বছর আগের পুরনো মেশিনগুলো ওভারহোলিং করার যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা সঠিক বলে মনে হয় না। তবে নতুন মেশিন কেনার আগে পুরনো মেশিনগুলো ওভারহোলিং করার সুপারিশ করেছিল প্রকৌশল বিভাগ। কিন্তু নতুন মেশিন আনার পর পুরনো মেশিনের কার্যক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, পুরনো মেশিনগুলো ওভারহোলিং করা হলে শুধু অর্থের অপচয় হবে। তাই পুরনো মেশিনগুলো ওভারহোলিং করা বাস্তব ও যুক্তিসংগত হবে না। বিশ্বে প্রযুক্তি এত দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে যে, ১৫-২০ বছর আগের প্রযুক্তিও বর্তমানে অচল। তাই ৪০ বছর আগের প্রযুক্তিসম্পন্ন মেশিনগুলো বর্তমানে একেবারেই অচল এবং ওভারহোলিংয়ের অযোগ্য। তাছাড়া এ পুরনো মেশিনগুলোর যন্ত্রাংশ এখন সহজলভ্য নয়। কারণ পৃথিবীর কোনো দেশে এ মেশিনগুলোর যন্ত্রাংশ কেউ আর তৈরি করে না। তাই সংশ্লিষ্ট যন্ত্রের নাম, নম্বর, ছবি ইত্যাদি পাঠানোর পর প্রস্তুত করা হয়। ওভারহোলিং কোম্পানির সঙ্গে টাঁকশালের বিশেষ ব্যবস্থায় যন্ত্রাংশ পাওয়া নিশ্চিত করা হলেও প্রতিটি যন্ত্রাংশের দাম কয়েকগুণ বেশি। আবার সেই যন্ত্রাংশ পেতেও অনেক সময় লাগে। এ কারণে ছোট কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে মেশিন অচল থাকতে পারে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, পুরনো মেশিনগুলো ২০-২৫ বছর আগে ওভারহোলিংও করা হলে কিছুটা বেনিফিট পাওয়া যেত। কারণ মেশিনের আয়ুষ্কাল সাধারণ ১৫-২০ বছর। এর বেশি বছর হলে ওভারহোলিং করে সচল রাখা হলেও তা দিয়ে মানসম্পন্ন মুদ্রণ সম্ভব নয়। সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনে আমাদের দেশের ব্যাংক নোটসহ সরকারের বিভিন্ন নিরাপত্তাসামগ্রী মুদ্রণ করা হয়। নিরাপত্তাসামগ্রীর মুদ্রণের ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন ও সূক্ষ্ম মুদ্রণের সক্ষমতা অবশ্যই বিচার্য। শুধু এ কারণেই নকল রোধে পুরনো ও অচল মেশিনের মুদ্রণের পরিকল্পনা বাদ দেওয়া জরুরি। পুরনো মেশিনে ডিজাইনের অনুপঙ্খ অনুযায়ী ছাপা সম্ভব হয় না বিধায় ব্যাংক নোটে সূক্ষ্ম ত্রুটি থেকে যায়। ছাপার এই ত্রুটিই ব্যাংক নোটসহ নিরাপত্তাসামগ্রী জালকরণে সহায়ক। ওভারহোলিংয়ের মাধ্যমে কোনো মেশিনের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। পুরনো মেশিনগুলোর সিস্টেম বা অপশন হচ্ছে ম্যানুয়েল আর আধুনিক মেশিনগুলো হচ্ছে অটোমেটিক। এ কারণে পুরনো মেশিন ওভারহোলিং করে বর্তমান প্রযুক্তির ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল সিস্টেম ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ সংযোজন করে মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রনিক পদ্ধতির সূক্ষ্ম সমন্বয় কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সিনিয়র পরামর্শক ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, ‘একটি টাকা ছাপানোর মেশিনের লাইফ হচ্ছে ১৫ বছর। এই সময়ের পর ওভারহোলিং করলে আরও পাঁচ বছর ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু আমাদের দেশের টাঁকশালের মেশিন ৪০ বছরের পুরনো। টাকার মান ঠিক রাখতে হলে নতুন মেশিন স্থাপন করা দরকার। টাঁকশালের মেশিন আধুনিক প্রযুক্তির না হলে টাকা জাল করা হবে, ছাপার খরচ বেশি হবে, কাঁচামাল বেশি লাগবে। আমাদের টাঁকশালের মেশিন জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের তৈরি। এখন আর এ মেশিন তারা উৎপাদন করে না। ফলে কোনো পার্টস বিকল হলে অর্ডার দিয়ে বানাতে হয়। এতে খরচ বেশি হয়। ওভারহোলিং করতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে, তার সঙ্গে কিছু টাকা যোগ করলে নতুন মেশিন স্থাপন করা যাবে। এ কারণে এত পুরনো মেশিন ওভারহোলিং করা ঠিক হবে না।’

 

টাকা ছাপাতে সরকারের খরচ : প্রতি বছর নতুন টাকা ছাপাতে সরকারের খরচ হয় সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা। কোনো বছর ৭০০ কোটিও ছাড়িয়ে যায়। নানা কারণে টাকা নষ্ট হয়। প্রতি বছর বাংলাদেশ ব্যাংক নষ্ট নোট বাজার থেকে তুলে নিয়ে তার বিপরীতে নতুন নোট ছাড়ে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ১০০০ টাকার নোট ছাপাতে ৫ টাকা ও ৫০০ টাকার নোট ছাপাতে খরচ পড়ে ৪ টাকা ৭০ পয়সা। ২০০ টাকার নোটে ৩ টাকা ২০ পয়সা, ১০০ টাকার নোটে ৪ টাকা, ১০, ২০, ৫০ টাকার সব নোটেই দেড় টাকা। আর ৫ টাকা, ২ টাকার নোট ছাপাতে খরচ পড়ে ১ টাকা ৪০ পয়সা। সবচেয়ে বেশি খরচ হয় কয়েন তৈরিতে। প্রতিটি কয়েনে প্রায় সমপরিমাণ টাকা খরচ হয়। তবে কয়েন বেশি টেকসই। নোট ছাপানোর খরচের কথা চিন্তা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা তথা ক্যাশলেস ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছে।

টাকার প্রচলন কমানোর উদ্যোগ : তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় বিশে^র বিভিন্ন দেশেই এখন নগদ টাকার ব্যবহার কমেছে। বাংলাদেশ সেই পথে হাঁটতে শুরু করেছে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তঃব্যাংকিং লেনদেনের সুবিধার্থে নিয়ে এসেছে ‘বিনিময়’ নামে অ্যাপ। এর সাহায্যে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে সহজে লেনদেন করা যাবে। আর কেনাকাটায় গ্রাহক ও দোকানির মধ্যে সহজ লেনদেনের জন্য রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘বাংলা কিউআর’।

৮০ শতাংশ কালি বেশি খরচ হয় : পুরনো মেশিনগুলো ডাইরেক্ট প্রিন্টিং পদ্ধতির। এ পদ্ধতির মুদ্রণে নানাবিধ ত্রুটি থাকায় দীর্ঘ গবেষণার পর ইনডাইরেক্ট প্রিন্টিং মেশিন উদ্ভাবন করা হয়েছে। ডাইরেক্ট প্রিন্টিং মেশিনে উচ্চমূল্যের কালির অপচয় হয়। এ পদ্ধতির মেশিন থেকে ইনডাইরেক্ট প্রিন্টিং মেশিনে ৩০ শতাংশ কালি কম খরচ হয়। ব্যাংক নোট মুদ্রণে যে পরিমাণ ব্যয় হয়, তার ৮০ শতাংশ হয় কালির পেছনে। পুরনো মেশিনগুলো ওভারহোলিং করা হলেও ইনডাইরেক্ট প্রিন্টিং পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তাই ওভারহোলিং করা মেশিনে কালির পেছনে খরচের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। সারা বিশ্বে নিরাপদ ও উৎকৃষ্ট ব্যাংক নোট ছাপায় ৮-১০ কালারের মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের দেশের টাঁকশালে ৬ কালারের মেশিন ব্যবহার করা হয়।

৮ হাজারের স্থলে ২ হাজার শিট ছাপা যায় : নতুন মেশিনে প্রতি ঘণ্টায় ১১ থেকে ১২ হাজার শিট উৎপাদন করা সম্ভব হয়। আর টাঁকশালের মেশিনগুলো স্থাপনের পর একসময় উৎপাদন ক্ষমতা ছিল প্রতি ঘণ্টায় আট হাজার শিট। এখন এটি কমে গিয়ে উৎপাদন ক্ষমতা দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার শিটে নেমেছে। এগুলো ওভারহোলিং করা হলে নতুন মেশিনের মতো উৎপাদন করা যাবে না। এসব মেশিন ওভারহোলিং করা মেশিনে ব্যয় অনুপাতে রিটার্ন কম আসবে। ব্যাংক নোটের গুণগত মানের ভিত্তিতে একটি দেশের ভাবমূর্তি নির্ভর করে।

টাঁকশাল স্থাপনের গোড়াপত্তন : ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দেশে কিছুদিন পাকিস্তানি টাকার প্রচলন ছিল। তখন ওই টাকাগুলোতে ‘বাংলাদেশ’ লেখা স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হতো। পাকিস্তানি মুদ্রার পরিবর্তে বাংলাদেশের মুদ্রা হিসেবে টাকার প্রচলন শুরু হয় ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ। টাঁকশালে টাকা ছাপানো শুরুর আগপর্যন্ত ভারত, সুইজারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি থেকে বাংলাদেশের নোট ছেপে আনা হতো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাধীনতার পর স্বল্পতম সময়ের মধ্যে নিজস্ব মুদ্রা চালুর প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। জরুরি ভিত্তিতে নিজেদের প্রেসে নোট ছাপিয়ে দিয়ে সে সময় বাংলাদেশের টাকা সরবরাহ করে ভারত। তবে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে নোট মুদ্রণের কারণে সে সময় নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যে কিছু ঘাটতি থেকে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ১৯৭৩ সালের ৩ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তি জারি করেন তৎকালীন অর্থ সচিব। ওই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভারত থেকে মুদ্রিত ও প্রাথমিক পর্যায়ে চালু করা জলছাপবিহীন এবং বাংলাদেশের মানচিত্রের রূপরেখা সংবলিত কয়েকটি নোট অচলের ঘোষণা দেওয়া হয়। ১০০, ১০ ও ৫ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোট অচলের এ ঘোষণা কার্যকর হয় ওই বছরের ১ মে। ভারতে মুদ্রিত ১ টাকা মূল্যমানের মানচিত্র সিরিজের নোটটি অচলের ঘোষণা কার্যকর হয় ১৯৭৪ সালের ৩০ মার্চ।

বাংলাদেশে টাঁকশাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ১৯৮৩ সালে একনেকে। পরে ১৯৮৯ সালে গাজীপুরে প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের আগে ১৯৮৮ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ১ টাকা ও ১০ টাকার নোট ছাপানো হয়েছিল। টাঁকশালে শুধু টাকাই ছাপা হয় না। এটি টাকা ছাপানোর উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হলেও সরকারের বিভিন্ন নিরাপত্তাসামগ্রী ছাপানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সঞ্চয়পত্র, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, রাজস্ব স্ট্যাম্প, আদালতে ব্যবহৃত বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক সামগ্রী, স্মারক ডাকটিকিট, খাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ট্যাক্স লেবেল, ব্যাংকের চেক বই, প্রাইজবন্ড, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর জিএসপি ফরম, দেশের সব শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার নম্বরপত্র ও সনদপত্র। এ ছাড়া কোনো কোনো কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরোধে তাদের শিক্ষা সনদপত্র ছাপানো হয়ে থাকে।

সংবাদটি শেয়ার করুন।

    No feed items found.