প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
৩রা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

চালের দাম আরও বেড়েছে

editor
প্রকাশিত আগস্ট ৩, ২০২৪, ০৪:৫২ অপরাহ্ণ

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

বিগত দুই সপ্তাহ ধরে চালের বাজার চড়া। এ সপ্তাহে এসে চালের দাম আরও বেড়েছে। এ দফায় খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ল কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা, আর পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। এ সপ্তাহে চালের দাম বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ী দায় চাপাচ্ছেন বৃষ্টির ওপর। তারা জানান, গত দুতিন দিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় টানা বৃষ্টি ও বন্যার কারণে চালের দাম বেড়েছে। কারণ চাতালগুলোতে চাল শুকানো ও ধান মাড়াইয়ের কাজ ব্যাহত হয়েছে। তবে ক্রেতারা বলছেন, এসব ব্যবসায়ীদের খোঁড়া অজুহাত।

 

এদিকে বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমলেও ৫০ থেকে ৬০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি। এ ছাড়া মাছের দাম কিছুটা কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগি ও ডিমের দাম।

 

চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি দেশি বাসমতি ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের মিনিকেট চালের কেজি এখন ৭০ থেকে ৭২ টাকা। আর ভালো মানের মিনিকেট চালের কেজি এখন ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। খুচরা বাজারে নাজিরশাইল চালের কেজি এখন ৭৬ থেকে ৮০ টাকা, আগে ছিল ৭২ থেকে ৭৫ টাকা।

 

মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো যে চাল কেনেন বাজারে এখন সেই চালেরই দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। যেমন বিআর ২৮ ও ২৯ চাল এক মাস আগেও ছিল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা, এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। এ ছাড়া মোটা স্বর্ণা ৫৪ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৬-৫৮ টাকা এবং মোটা হাইব্রিড চালের কেজি ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫০-৫২ টাকা।

 

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত মাসের মাঝখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও পরে কারফিউয়ের কারণে পরিবহন সমস্যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য সরবরাহে বিঘ্নের ঘটনায় দাম বেড়ে যায়। এখন আবার নতুন করে চালের দাম বেড়েছে বৃষ্টির কারণে।

 

অবশ্য চালের দাম বৃদ্ধির জন্য খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন মিল মালিকদের। নওগাঁ চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, বাজারে ধান ১২৫০-১৫২০ টাকা মণ। গত এক মাসে প্রকারভেদে সবধরনের ধানের দাম মণে ১৫০-২০০ টাকা বেড়েছে। চালকল মালিকরা বেশি দামে ধান কিনে চাল উৎপাদন করতে খরচ বেশি পড়ছে। যে কারণে চালের দাম বেড়েছে।

 

এদিকে বাজারে অন্যান্য পণ্যের গতি-প্রকৃতি স্বাভাবিক না হলেও সপ্তাহের ব্যবধানে সবজি, মাছ ও ডিমের দাম আগের অবস্থায় ফিরেছে। তবে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না।

 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জেরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজারে এখনও তার রেশ আছে। বাজারে মানুষ কম আসছে। তাতে বিক্রি কমেছে। পণ্যের সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম কিছুটা কমেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়, বরবটি ১০০ টাকায়, কাঁকরোল ৭০-৮০ টাকায়, পটোল ৫০-৬০ টাকায়, মরিচ ১৮০-২০০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৬০-৭০ টাকায়, ধুন্দল ৫০-৬০ টাকায়, পেঁপে ৬০ টাকায়, কচুর লতি ৭০-৮০ টাকায়, কচুমুখী ৭০-৮০ টাকায়, শসা ৬০-৭০ টাকায়, গাজর ১২০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া ও টমেটো ১৫০-১৮০ টাকায়।

 

সবজি বিক্রেতারা জানান, বাজারে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, যা ছিল ৮০ টাকা। গাজর ১২০ টাকায়, যা ছিল ১৬০ টাকা। শসা বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। টমেটোর সিজন শেষ হয়ে যাওয়ায় টমেটোর দাম দিন দিন বাড়ছে। বাজারে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায় এবং কচুমুখী বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকায়।

 

সবজি বিক্রেতা সায়েদুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার এলে কিছু জিনিসের দাম এমনিতেই বেড়ে যায়। শুক্রবার এলে শসা, টমেটো আর গাজরের চাহিদা বাড়ে, দামও বাড়ে।

 

অন্যান্য সবজি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ার দামটা একটু বাড়তি। সারা দেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ঢাকায় অনেক গাড়ি আসতে ভয় পায়, অনেকে আসতে চায় না, এলেও ভাড়া বেশি দিতে হয়। আর এসবের প্রভাব এসে বাজারমূল্যে পড়ে।

 

বেসরকারি চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন আগেও এক পোয়া কাঁচামরিচ কিনেছি ৪০ টাকায়, আজ সেটিই কিনলাম ৬০ টাকায়। সবকিছুর দাম বাড়তি যাচ্ছে, সেখান থেকে আমাদের ছাড় দেয়নি কাঁচামরিচও। এটারও এখন বাড়তি দাম। আমার তো মনে হচ্ছে, সপ্তাহের ব্যবধানে এত দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের শক্ত সিন্ডিকেটই দায়ী। তারা অধিক লাভের আশায় ইচ্ছাকৃতভাবেই দাম বাড়িয়েছে।

 

তবে কিছুটা দাম কমেছে ডিমেরও। গতকাল বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের বাদামি রঙের ডিম ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকাতেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। এদিকে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ও সোনালি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

এদিকে ভরা মৌসুমে বাজারে মিলছে না ইলিশ। এ কারণে অন্যান্য মাছের দামও তুলনামূলক বেশি। বাজারে ৮০০ টাকার নিচে ছোট জাটকা ইলিশও পাওয়া যাচ্ছে না। ৭০০-৮০০ গ্রাম সাইজের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা। ১ কেজি ওজন হলে ১৫০০-১৮০০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন।

    No feed items found.