স্টাফ রিপোর্টার:
যোগদানের ৪ মাসও অতিবাহিত হয়নি। এই অল্প সময়ে বেশ কুখ্যাতি কামিয়েছেন বিয়ানীবাজার উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার গৌতম কুমার শীল। তার দপ্তরে জমা আছে ফাইলের স্তুপ। রফাদফা কিংবা ম্যানেজের পরই ফাইল ছাড়েন তিনি। সার্ভেয়ার গৌতমের উপর নাখোশ খোদ সহকারি কমিশনার (ভূমি) নিজে। কিন্তু দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা বলে সূত্র জানায়।
সার্ভেয়ার গৌতমের বাড়ি কুমিল্লার শ্রীমন্তপুরে। আওয়ামীলীগের সাবেক বিতর্কিত এমপি আকম বাহাউদ্দিন বাহারের মাধ্যমে তিনি সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন। বাহারের অন্যতম সহযোগী ও আওয়ামী লীগ নেতা টিপু সুলতান ওরফে টাইগার টিপু সার্ভেয়ার গৌতমের সহপাঠি। তারা উভয়েই ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন। গৌতম তৎকালীন সময়ে কলেজ ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদেও দায়িত্ব পালন করেন। সেই সুবাদে সার্ভেয়ার হিসেবে সব সময় লোভনীয় এলাকায় পদায়ন হতো তার। বিয়ানীবাজারের আগে তিনি হবিগঞ্জ সদর সহকারি ভূমি কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতিতে জড়ালে ওই এলাকায় তার বিরুদ্ধে মিছিল হয়। পরে এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে কর্তৃপক্ষ তাকে বদলী করে বিয়ানীবাজারে পদায়ন করেন।
বিয়ানীবাজারে সার্ভেয়ার পদে যোগদানের পর নিজস্ব স্টাইলে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন গৌতম। মিসকেইস, নাম সংশোধন, খতিয়ান সংশোধনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে তার সাথে চুক্তি করতে হয়। অন্যথায় ফাইল আটকে দেন তিনি। এরকম অন্তত: শতাধিক অভিযোগ ওঠেছে তার বিরুদ্ধে। ঘুঙ্গাদিয়া গ্রামের একজন প্রবাসী চিকিৎসক সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগে বলেন, ‘সার্ভেয়ার গৌতম ঘুষ ছাড়া কোনো কাজেই করেন না। ঘুষ পেলে তিনি অন্যায়কে ন্যায় এবং ন্যায়কে অন্যায় বলে চালান।’
ভূমি অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে অনলাইনে সেবা চালু করেছে সরকার। এর মধ্যে জমির নামজারি, খাজনা ও মিসকেস সেবা অন্যতম। স্থানীয় ভুক্তভোগীরা বলছেন, অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অনলাইনে আবেদনের পর আবার মূল কাগজপত্র নিয়ে ভূমি অফিসে যোগাযোগ করতে হয়। গ্রাম এলাকায় জমির কাগজসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা সমাধানে প্রথমেই যেতে হয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। পরের ধাপে সেবা দেয় উপজেলা ভূমি অফিস। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন এসব অফিসের দেওয়া সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে—ভূমিহীনদের মাঝে কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত, খতিয়ানের ভুল সংশোধন, নামজারি ও জমাভাগ, ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণীর আপত্তি-নিষ্পত্তি, দেওয়ানি আদালতের রায় বা আদেশমূলে রেকর্ড সংশোধন, ভূমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন নিষ্পত্তি, জমা একত্রকরণ ও বিবিধ কেসের আদেশের নকল বা সার্টিফায়েড কপি প্রদান ইত্যাদি। আর এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজের বেশীরভাগ হয় সার্ভেয়ারের টেবিলে। এসব প্রতিটি কাজের বিপরীতে গৌতম নেন ৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করতে তাদের নথিপত্র পর্যন্ত গায়েব করে দেন ওই সার্ভেয়ার।
এসব বিষয়ে সার্ভেয়ার গৌতম কুমার শীল জানান, ছাত্রলীগ করেছি কিংবা বাহার ভাইয়ের লোক-এটা সত্য। তবে এখন রাজনীতির দ্বারে-কাছেও নেই। তিনি বলেন, যোগদানের পর জানামতে কোন দূর্নীতি করেননি। কাগজপত্র সঠিক না হলে সেবা গ্রহীতারা আমাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে অনেকে বখশিশ দেন।
সংবাদটি শেয়ার করুন।