প্রজন্ম ডেস্ক:
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন। যদিও সেখানে ঠিক কোথায় তিনি আছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভারত থেকে শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য কোথায়, তা নিয়ে চলছে এখন জল্পনা–কল্পনা।
শুরুতে ধারণা করা হচ্ছিল, শেখ হাসিনা ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে যাবেন। কিন্তু তাঁর যুক্তরাজ্য যাওয়ার সম্ভাবনা এখন অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। কারণ, যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি আশ্রয় বা সাময়িক আশ্রয়ের জন্য দেশটিতে যেতে পারবেন না।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ তথ্য জানায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই মুখপাত্র বলেছেন, ‘যেসব ব্যক্তির প্রয়োজন, তাঁদের সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের গর্বিত রেকর্ড রয়েছে। তবে আশ্রয় বা সাময়িক আশ্রয়ের জন্য কাউকে যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়ার কোনো বিধান নেই। যাঁদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষা প্রয়োজন, তাঁদের প্রথমে নিরাপদ যে দেশে পৌঁছান, সেখানে আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত। এটি সুরক্ষার দ্রুততম পথ।’
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। ২০১৬ সালের ২৮ জুলাই সই হওয়া ওই চুক্তিতে দুই দেশের মধ্যে পলাতক অপরাধীদের দ্রুত প্রত্যর্পণের কথা বলা আছে।
শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র যাবেন কি না, সেটা নিয়েও কথা হচ্ছে। তাঁর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হয়েছে কি না, চলছে আলোচনা সেটা নিয়েও।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনার ছেলে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সজীব ওয়াজেদ জয় এনডিটিভিকে বলেছেন, ভিসা বাতিল বিষয়ে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি’। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা কোথাও আশ্রয়ের জন্য অনুরোধও করেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ভারতের পত্রিকা দ্য হিন্দু জানায়, গণ–আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগের পর শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য আবেদন করেছেন কি না, তা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জানা নেই। তবে তাঁরা এটা নিশ্চিত করে বলেছেন, শেখ হাসিনার কাছে যুক্তরাষ্ট্রের যে ভিসা রয়েছে, সেটি তাঁর অফিশিয়াল পাসপোর্টে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। আর যেহেতু তিনি এখন পদত্যাগ করেছেন, তাই ‘ওই ভিসা আর কার্যকর নয়’।
শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর বোন শেখ রেহানাও রয়েছেন। শেখ রেহানা যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক এবং যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টধারী। তাঁর মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। টিউলিপ এখন যুক্তরাজ্যের নতুন সরকারের এমপি এবং ‘সিটি মিনিস্টার’।
তবে কি শেখ হাসিনা ভারতেই থেকে যাবেন? এ বিষয়ে মঙ্গলবার জার্মানির সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, তাঁর মায়ের ভারত থেকে অন্য কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা নেই।
শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দিল্লিতে থাকেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে সেখানে দায়িত্বরত।
ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা ভালো আছেন, এখন দিল্লিতে আছেন৷ আমার বোন ওনার কাছে আছেন। আমার বোন তো দিল্লিতে থাকেন৷’
বাংলাদেশের জন্ম থেকেই ভারতের সঙ্গে ঢাকার এবং শেখ হাসিনার পরিবারের সুসম্পর্ক রয়েছে। ভারতের বর্তমান নরেন্দ্র মোদি সরকারের সঙ্গেও এক দশক ধরে শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের সুসম্পর্ক ছিল। তাই দিল্লির জন্য শেখ হাসিনা এবং তাঁর আশ্রয় দেওয়া বা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।
শেখ হাসিনার কাছে এখন যুক্তরাষ্ট্রের যে ভিসা রয়েছে, সেটি তাঁর অফিশিয়াল পাসপোর্টে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। যেহেতু তিনি এখন পদত্যাগ করেছেন, তাই তাঁর ‘ওই ভিসা আর কার্যকর নয়’।
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় ঢাকায় নতুন যে সরকার গঠিত হবে, তাদের সঙ্গেও দিল্লি সুসম্পর্ক স্থাপন করতে চাইবে। বিশেষ করে কৌশলগত, বাণিজ্য এবং সংযোগ–সম্পর্কিত অংশীদারত্ব অব্যাহত রাখতে চাইবে।
সে ক্ষেত্রে যদি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বা নতুন কোনো সরকার শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে জবাব চায়, তবে দিল্লির জন্য তার ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
ভারতের সামনে অন্য একটি সমস্যার কথাও বলেছে দ্য হিন্দু। যদি সবকিছু উপেক্ষা করে ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে সে দেশে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ও, তবে তাঁর দল আওয়ামী লীগের অন্য নেতা–কর্মীরাও ভারতের কাছে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করবেন। সে ক্ষেত্রে ভারত প্রতিবেশী বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে, এমন অভিযোগ উঠতে পারে।
বাংলাদেশ ছাড়ার সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর বোন শেখ রেহানাও ছিলেন। শেখ রেহানা যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক এবং যুক্তরাজ্যের পাসপোর্টধারী। তাঁর মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। টিউলিপ এখন যুক্তরাজ্যের নতুন সরকারের সংসদ সদস্য এবং ‘সিটি মিনিস্টার’।
শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কিতে বসবাস করেন। রাদওয়ানের স্ত্রী ফিনল্যান্ডের নাগরিক। এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য কি ফিনল্যান্ড হতে পারে? এটা নিয়েও আলোচনা চলছে।
২০২১ সালে করোনা মহামারির সময় নিউইয়র্ক সফরে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনা হেলসিঙ্কিতে বিরতি নিয়েছিলেন এবং রাদওয়ান ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনার ফিনল্যান্ড যাওয়া না–যাওয়া নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
পরিবারের সদস্যদের অবস্থানের কারণে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড এবং ভারতে থাকতে বা যেতে পারেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই চার দেশ ছাড়াও শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই এবং সৌদি আরবের নামও শোনা যাচ্ছে।
নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য প্রিন্ট–এর খবরে বলা হয়, শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য দুবাই হতে পারে। তবে তিনি এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।
ওই সূত্র আরও বলেছে, ভারতে শেখ হাসিনা কত দিন থাকতে পারবেন, সে বিষয়ে কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। ভারত সরকার চাইছে, যত দ্রুত সম্ভব তাঁর জন্য একটি গন্তব্য খুঁজে দিতে।
সংবাদটি শেয়ার করুন।