প্রজন্ম ডেস্ক:
নতুন সরকারপ্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণ করায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের অনেকে। তারা নতুন সরকারপ্রধানের কাছে রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে, বিশেষ করে আমেরিকা ও ইউরোপে বাজার বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতারা ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য হয়রানিমুক্ত পরিবেশ, ওয়ানস্টপ সেবা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন, ব্যবসায় খরচ কমাতে নীতিসহায়তা, স্বচ্ছতা ও নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার কথাও বলেছেন। ব্যবসায়ী নেতারা সুবিধাবঞ্চিত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছেন। ডলারসংকটে বিপর্যস্ত দেশের সাধারণ ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার সুযোগ দেওয়া এবং স্থানীয় শিল্প উৎসাহিত করতে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
ডলারসংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে নেতিবাচক ধারা চলছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। বছর দুয়েক থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো যাচ্ছে না। তৈরি পোশাকশিল্পসহ রপ্তানির অনেক খাতেই বাজার কমেছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই এলসি খুলতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে যা কেনার সুযোগ পাচ্ছেন, তার দাম বেশি পড়ছে। জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ে খরচ বেড়েই চলেছে। আমদানি কমায় পণ্য সংকটে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। নতুন বিনিয়োগ আসছে না বললেই চলে। গড়ে উঠছে না শিল্পকারখানা। রিজার্ভ কমেছে। রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক ধারা প্রবহমান। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি। সবকিছু মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি ভালো নেই। এমন পরিস্থিতিতে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।
অনেক ব্যবসায়ী নেতা মনে করছেন যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশ্বব্যাপী যে সুখ্যাতি রয়েছে, তার এই ভাবমূর্তি কাজে লাগিয়ে রপ্তানিতে সুবাতাস আসবে। বিশেষভাবে ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি বাড়ানোর বিভিন্ন ধরনের সুবিধা আদায় করা সম্ভব হবে। অর্থনীতির এ বিশেষজ্ঞের গ্রহণ করা নীতি গোটা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘সরকারপ্রধান হিসেবে যিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তার সুখ্যাতি বিশ্বব্যাপী। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া অনেক ফর্মুলা কাজে লাগিয়ে বিশ্বের অনেক দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গিয়েছে। আমরাও ওনার পরামর্শে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে চাই। বিশেষভাবে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ সহায়ক নীতিসহায়তা পাব বলে আশা করছি। নতুন সরকার রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করি। আমরা ব্যবসায়ীরা নতুন সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করব।’
ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, ‘ডলারসংকটে বিপাকে থাকা দেশের সাধারণ ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার সুযোগ দিতে হবে। স্থানীয় শিল্প উৎসাহিত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশি বিনিয়োগ বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।’
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকের মাপকাঠিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ খরচ বেশি। অনেক দিন থেকেই কারখানায় চাহিদামতো গ্যাস-বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। দামও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অনেক খাতে শুল্ক-কর-ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। ব্যাংকঋণে সুদের হারও বেশি। বিদ্যমান এসব বাধার কারণে নতুন বিনিয়োগ উৎসাহিত হচ্ছে না।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি)-এর সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘দেশ গড়ে তুলতে হলে শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামো দরকার। আমাদের কাছে কে সরকারে থাকবেন, তার চেয়ে তিনি কীভাবে অর্থনৈতিক নীতি কাঠামো নির্ধারণ করছেন তা বেশি জরুরি। নতুন সরকারপ্রধান একজন বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ। আমাদের সৌভাগ্য যে তার মতো একজনকে সরকারপ্রধান হিসেবে পেয়েছি। আমরা বিনিয়োগবান্ধব নীতিসহায়তা প্রত্যাশা করি। ব্যবসায়ে খরচ কমাতে হবে। শুল্ক ভ্যাট কর কাঠামো সহজ করতে হবে।’
সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হয়। অনেক দিন থেকেই হয়রানি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। কিন্তু খুব একটা কাজ হয়নি। নতুন সরকারের কাছেও তারা এসব দাবি করেন।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘নতুন সরকারকে অভিনন্দন। নতুন সরকারপ্রধানের কাছে আমেরিকা ও ইউরোপে বাজার বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানাই। এ ছাড়া ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য হয়রানিমুক্ত পরিবেশ, ওয়ানস্টপ সেবা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন, ব্যবসায় খরচ কমাতে নীতিসহায়তা দেওয়ার দাবি জানাই।’
তৈরি পোশাকশিল্পের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এবং মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারপারসন রুবানা হক বলেন, ‘নতুন সরকারের কাছে ব্যবসায়ে স্বচ্ছতা ও বিনিয়োগবান্ধব নীতির ধারাবাহিকতা চাই।’
বড় প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পেলেও ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ব্যবসায়ীরা তা পান না বললেই চলে। বিশেষভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও তাদের সহায়তা করা হয় না, এমন অভিযোগ আছে। এসব প্রতিষ্ঠান বিপণন সুবিধা, প্রযুক্তিগত সহায়তাও পায় না, এমন অভিযোগও বহুদিনের।
নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। বিশেষভাবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। করোনা শেষ না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। নতুন সরকারের কাছে সুবিধাবঞ্চিত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণার দাবি জানাই।’
সংবাদটি শেয়ার করুন।